ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর সংশোধনী চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোজা শুরুর আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইসিকে নির্দেশনা আসার পরপরই বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ সভা শুরু হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই নবম কমিশন সভায় উপস্থিত ছিলেন চার কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধিমালা এবং আরপিও সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কমিশন সচিব জানিয়েছেন, দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত করার পথে রয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংশোধনীতে প্রায় তিন ডজন পরিবর্তনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের সুযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর অপব্যবহার রোধে আচরণবিধিতে নতুন বিধিনিষেধ, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুপারিশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ।
কমিশন যদি এসব প্রস্তাব চূড়ান্ত করে, তাহলে সেগুলো আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদনের পর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা উপস্থাপন করা হবে। সরকারের সম্মতি পেলে সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।
এদিকে সংশোধনের এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সীমানা আইন, ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি পর্যবেক্ষক, স্থানীয় পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার জন্যও নতুন নীতিমালা তৈরি করে আবেদন আহ্বান করেছে ইসি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান এবং ইসি সচিবালয় আইনের সংশোধনী এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ভেটিং শেষে সেগুলোর অনুমোদনও উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার (৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনকে অনুরোধ জানানোর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ইতোমধ্যে সিইসি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডিসেম্বরের শেষার্ধ্বে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রোজা শুরুর আগেই দেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।