শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

৭ দিনের রিমান্ডে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক

প্রতিনিধি: / ৯ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিতর্কিত রায় এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। এবার সেই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হলো যখন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতিকে হত্যামামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হলো। একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো খায়রুল হক বর্তমানে জাল রায় তৈরি, রাজনৈতিক প্রভাবে বেআইনি সিদ্ধান্ত এবং বিচারব্যবস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি।

বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে পুলিশ পক্ষ তাঁর দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে জানায়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে বসে তিনি রাজনৈতিক প্ররোচনায় বেআইনি ও জাল রায় প্রদান করেছেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে।

সকাল ১০টার কিছু আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বিভিন্ন অভিযোগ শুনে মাথা নেড়ে ‘না, না’ বলতে থাকেন এবং একপর্যায়ে বলেন, “নট কারেক্ট, নট কারেক্ট।”

২০১১ সালের ১০ মে, আপিল বিভাগের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। মামলার বাদী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন অভিযোগ করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী এবং পদায়নের আশায় খায়রুল হক ওই রায়টি ‘ফেব্রিকেট’ করে পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত রায়ে দেখা যায়, আদালত পূর্বঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের ভাষা ও মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থান নেয়।

এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, এই রায় থেকেই পরবর্তীকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডের পথ তৈরি হয়। এতে শত শত তরুণ নিহত ও হাজারো মানুষ আহত হয়। প্রসিকিউশন পক্ষের মতে, বিচারপতি খায়রুল হকের রায় ছিল “রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ।”

গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিনই তাঁকে ২০২৪ সালের জুলাই গণআন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় নিয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয় গত বছরের ২৫ আগস্ট। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, খায়রুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে রায়ের ভাষা পরিবর্তন করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণ’ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত সব নথিপত্র তলব করেছে।

এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাঁকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। মেয়াদ শেষে কয়েক দফা পুনর্নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন।

অনেকের মতে, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিতর্কিত রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার হলে তা বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনে ভূমিকা রাখতে পারে।


এই বিভাগের আরো খবর