সর্বশেষ :
ফলোআপ: পাইকগাছায় কোটিপতির ভবন রক্ষায় সড়ক সরলীকরণ না হয়ে হচ্ছে বাঁকা: নকশা পরিবর্তন ও মাদ্রাসা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন পাইকগাছায় আমন ধানের ফলন ভাল হলেও ধানের মূল্য কম হওয়ায় কৃষক হতাশ ডেইলি স্টার অফিসে হামলা-ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয় ভাংচুর করে নথিতে আগুন দিলো বিক্ষুদ্ধ জনতা হাদি হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার শাহবাগ অবরোধ চট্টগ্রামে রাতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে হামলা, আটক ৮ ছায়ানটের ভেতরে পোড়া বই আর ভাঙা বাদ্যযন্ত্র, বাইরে কড়া পুলিশ পাহারা আজ সন্ধ্যায় দেশে আসবে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ, জানাজা শনিবার জব্দ রুশ সম্পদ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ নেতারা লুকানো কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে ইউক্রেন
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বাগেরহাটের মাটিতে মরু দেশের খেজুর চাষে  সফল জাকির হোসেন 

প্রতিনিধি: / ১২৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

এস এম রাজ,বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ  উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের লোনা মাটিতে এবার নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন এডভোকেট জাকির হোসেন। ২০১৯ সালে ইউটিউব দেখে সখের বসে শুরু করেছিলেন সৌদি খেজুরের চাষ। সেই সখ আজ তাকে সফল উদ্যোক্তায় নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
রামপাল উপজেলার সন্ন্যাসীর হাজীপাড়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন রামপাল সৌদি খেজুর বাগান।
৩০ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের খামারের বেড়িবাঁধে সৌদি খেজুরগাছ চাষ করছেন। এখন তার খেজুর বাগানে গাছের সংখ্যা ৪০০ প্রায়। প্রথমে এলাকাবাসী উপহাস করলেও গত ২ বছর ধরে খেজুরের ফলন দেখে অবাক। তার বাগানে ঝুলছে আজোয়া, মরিয়ম, আম্বার, বারিহীসহ অন্তত পাঁচটি জাতের খেজুর।
যাত্রাপুর থেকে নার্সারি দেখতে আসা বাদশা বলেন, আমার বাড়ি যাত্রাপুর আমি রামপাল এসেছি জাকির হোসেনের সৌদি খেজুরের বাগানটি নিজের চোখে দেখতে। মরুভূমির সৌদি আরবের খেজুর আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে এটা সত্যিই অবাক করার মতো। গাছগুলো ঘুরে দেখলাম, ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন তরফদার বলেন, জাকির ভাই আমাদের সবার পরিচিত ব্যক্তি তিনি ভালো মনের মানুষ। তার এই সৌদি খেজুরের সারি সারি গাছ দেখে অবাক হয়েছি। মরুর দেশে জন্ম নেওয়া যে ফসল, সেই খেজুর আমাদের এই অঞ্চলে চাষ হচ্ছে ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। গাছগুলোকে এত সুন্দর ও পরিপাটি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মন ভরে গেছে। জাকির ভাই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।
খামার দেখাশোনা করেন রেজাউল তরকদার বলেন, খেজুর গাছের পরিচর্যা নিয়ে অনেকেই হতাশ। তবে এই খেজুর গাছের পরিচর্যা তেমন কিছু নয়।  জৈব সার প্রয়োগ করি এবং মাসে একবার গাছগুলোতে স্প্রে করে দেই। তবে গন্ডার পোকা নামে একটি পোকা আছে যা গাছের মূলে খেয়ে ফেলে। তখন গাছটি মারা যায়। এই পোকার ওষুধ পাওয়া গেলে গাছের ফলন আরো ভালো হবে।তাই গাছগুলো যেন রোগমুক্ত থাকে, সেজন্য সময়মতো ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। খেজুরের ফুল ফোটা থেকে শুরু করে ফল পাকার প্রতিটি ধাপেই আলাদা মনোযোগ দিতে হয় যেমন ধরুন গাছের গোড়ায় আগাছা পরিষ্কার করা, পাখি, ইঁদুর , পোকামাকড় খেয়ে ফেলে খেজুর গুলো এছাড়া বৃষ্টির সময় পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয় কারন তা না হলে বৃষ্টির পানি লেগে খেজুর নষ্ট হয়ে যায়। গাছে কলম বাঁধতে হয় ।এই খেজুর গাছের সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে কটা পোকা এইটা ধরলে গাছ মারা যায়। আর এই খেজুর পাকা শুরু করলে একটা গন্ধ ভেসে বেড়ায় আর এই গন্ধে পাখি আসে এসে খেজুর নষ্ট করে ফেলে।
সফল উদ্যোক্তা এডভোকেট  জাকির হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ৩০বিঘা জমিতে ৯টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। পুকুরের পাড়জুড়ে বিভিন্ন ফলজ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লোনা পানির জন্য এসব ফসলে লাভ হচ্ছিল না। অন্য দিকে অতিরিক্ত লোনা পানির কারণে ঘেরে গলদা চিংড়ি বা কার্পজাতীয় মাছ ভালো হয় না। তারপর কয়েক বছরে বাগদা চিংড়িতেও লোকসানে পড়ি। পরে হতাশা কাটিয়ে উঠতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘রামপাল সৌদি খেজুর বাগান’ নাম দিয়ে এই খেজুর চাষ শুরু করি।প্রথম দিকে লোকজন আমাকে বলছে নোনা পানি আর মাটি ও‌ নোনা এতো টাকার চারা রোপণ করলে কি বাঁচবে। কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে শুরু করি আমার পথ চলা।ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ৬০টি সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। বর্তমানে আমার বাগানে আজোয়, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহি ,এই পাঁচ জাতের ৪০০ টি ছোট বড় মিলিয়ে খেজুর গাছ রয়েছে। বর্তমানে ৮০টি গাছে ফলন হলেও আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ গাছে খেজুর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিক উপায়ে আরো খেজুর ও চারা বিক্রি করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন,যারা নতুন এই চাষের পরিকল্পনা করছেন তাদের অবশ্যই একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে কলম ও বীজ দুভাবেই সৌদি খেজুরের চারা তৈরি হয়। এই বীজের চারার বেশির ভাগ পুরুষ হয়ে যায়। ফলে ফল আসে না। তাই নতুন যারা শুরু করবে, তাদের কলমের (অপ শুট) চারা কেনার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। আমার এখানে এখন সার্বক্ষণিক তিনজন কর্মচারী রয়েছে। ভবিষ্যতে এই নার্সারিতে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ মোতাহার হোসেন বলেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফসল। লোনা পানির জমিতে এই ফসল চাষের খবর শুনে প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি এডভোকেট জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। এখন যদি খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকে, তাহলে লোনা পানির এলাকার জন্য এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত হবে। সৌদি খেজুর চাষের এই উদ্যোগকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


এই বিভাগের আরো খবর