সচিবালয়ে কর্মচারীদের টানা আন্দোলনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধনের উদ্যোগ বাস্তব রূপ পেল। সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা রেখে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং শেষে অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। তবে সংশোধিত অধ্যাদেশের কোন কোন ধারা পরিবর্তন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পূর্ববর্তী অধ্যাদেশে সরকারের চোখে দোষী প্রমাণিত কোনো কর্মচারীকে দুই দফায় মোট ১৪ দিনের নোটিশে, তদন্ত ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত বা নিম্নপদে নামিয়ে দেওয়ার বিধান ছিল। এরই প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলনে নামেন। চলমান অসন্তোষ নিরসনে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, শাস্তির আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান বাধ্যতামূলক করা হবে। সংশোধিত প্রস্তাবে নারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তদন্ত কমিটিতে একজন নারী কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত রাখার নির্দেশনাও রাখা হয়েছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল অন্তত দুটি সূত্র, যারা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তারা জানিয়েছেন, কর্মচারীদের উদ্বেগ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, সংশোধনের পর আর কোনো জটিলতা থাকবে না।
এছাড়া, ওই বৈঠকে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস’ ১৫ মার্চের পরিবর্তে ৩ ডিসেম্বর পালন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’-কে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত করা এবং ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা। পাশাপাশি, ওআইসি লেবার সেন্টারের সংবিধিতে সই এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গৃহীত ‘ব্যয়িত জ্বালানি ব্যবস্থাপনা এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা বিষয়ক যৌথ কনভেনশন’-এ সইয়ের প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধনের এই উদ্যোগ কর্মচারীদের ন্যায্যতা রক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।