ফিটনেটবিহীন গাড়ি বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা হাঁকডাক দেয়া হলেও এখনো সড়ক ওসব গাড়িরই দখলে। দেশজুড়ে সড়ক দাবিয়ে বেড়াচ্ছে লক্কর-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন গাড়ি। সরকার সময় বেঁধে দিলেও ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসেনি। বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ দেশের ৭৫ হাজারের বেশি বাস ও ট্রাক। সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ ওসব মোটরযান। যদি গতবছরের অক্টোবরে সরকার ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়ে ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু সরকারি ঘোষণা তোয়াক্কা না করেই ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে সেবার মানেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিআরটিএ এবং পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২৩ সালে তৎকালীন সরকার যাত্রীবাহী বাসের অর্থনৈতিক আয়ু ২০ বছর এবং পণ্যবাহী গাড়ির আয়ু ২৫ বছর নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। কিন্তু পরিবহন মালিকদের চাপে তিন মাস পর প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়। দেশের সড়ক পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ১০ হাজার ৫৫৬টি ২০ বছরের পুরনো বাস ও মিনিবাস রয়েছে। তার বাইরে সারা দেশে আরো ১৮ হাজার ২০৫টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২৫ বছরের পুরনো পণ্যবাহী (ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি) মোটরযানের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩টি। এর বাইরে সারা দেশে আরো ৩১ হাজার ৭৯৮টি পণ্যবাহী মোটরযান রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাকের সংখ্যা ৭৫ হাজারেরও বেশি।
সূত্র জানায়, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত বছরের অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বায়ুদূষণ কমাতে ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) অনুরোধ জানানো হয। একইসঙ্গে পুরনো ডিজেল চালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালুর অনুরোধ জানানো হয়। তারপর গত বছরের ওই অক্টোবরেই সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা এক আলোচনা সভায় জানিয়েছিলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছরের পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ প্রভৃতি মোটরযান রাস্তা থেকে অপসারণ করতে হবে। আর তারই অংশ হিসেবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক উপদেষ্টা ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক ভেহিকেল চালু করার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সুযোগ নিতে বলেন এবং সেজন্য সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও উপদেষ্টা জানান। তাছাড়া গত জানুয়ারি মাসে মিরপুর ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলে বিআরটিএর সেবা সহজীকরণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, মে মাস থেকে সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন বাস চলতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু মালিকদের দেয়া ছয় মাস সময় গত এপ্রিলেই অতিবাহিত হয়েছে। ওই একই অনুষ্ঠানে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছিলেন, ঢাকার বাসগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। এর আগে আরো খারাপ ছিল। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় অনেক উন্নতি দেখা যাবে। কিন্তু এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি রাস্তায় অবাধে চলছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, ঈদের (আসন্ন ঈদুল আযহা) সময়টা সরকার একটু দেখতে চায়। এখন সীমিত পরিসরে পুরনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঈদের পর বড় আকারে অভিযান শুরু হবে। কারণ ঈদের সময় মানুষের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের একটা বিষয় আছে।
https://www.kaabait.com