• শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ০৩:৫৫

সরকার অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতায় যেতে পারে

প্রতিনিধি: / ৭ দেখেছেন:
পাবলিশ: বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫

দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যেই অর্থ ফেরতের বিকল্প উপায় হিসেবে ‘আর্থিক সমঝোতা’র বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে গঠিত এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য, কম গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি আইনি প্রক্রিয়ার পরিবর্তে দ্রুত অর্থ পুনরুদ্ধার।

রোববার (৮ জুন) ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের নেতৃত্বদানকারী আহসান এইচ মনসুর এই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, যেসব মামলায় আইন লঙ্ঘনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে হালকা, সেখানে দেওয়ানি মামলা এবং আর্থিক সমঝোতার কথা বিবেচনা করা হতে পারে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরপরই ১১টি অগ্রাধিকারভিত্তিক তদন্ত শুরু করেছে। এসব তদন্তের লক্ষ্য হচ্ছে—পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর সম্পদ পাচারের বিষয় খতিয়ে দেখা। একইসঙ্গে, দেশে থাকা কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার চেষ্টা চলছে।

এই প্রেক্ষাপটেই গভর্নর মনসুর জানিয়েছেন, তার দল বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মামলার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করছে। আন্তর্জাতিক মামলার খরচ, যেমন আইনজীবীর ফি ও আদালতের ব্যয় বহনে এ ধরনের তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ইউনূস সরকারের এই প্রচেষ্টাকে আন্তর্জাতিক মাত্রা দিতে সম্প্রতি লন্ডন সফর করেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে পাচারকৃত অর্থ শনাক্তে আরও ‘উৎসাহব্যঞ্জক সহযোগিতা’র আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এটা চুরি হওয়া অর্থ। আইনগতভাবে এবং নৈতিকভাবেও যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত এই অর্থ শনাক্ত করতে সহায়তা করা।”

সরকারি নির্দেশনায় প্রস্তুতকৃত ও গত ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে অনুমান করা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। আহসান মনসুর, যিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা, অভিযোগ করেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আধিপত্য বিস্তার করে জাল ঋণের মাধ্যমে কিংবা সরকারি প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে এই পাচার চালিয়েছেন।

এই প্রক্রিয়ায় বিদেশি মামলার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও অংশগ্রহণ বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অমনি ব্রিজওয়ে জানিয়েছে, তারা এ বছরের প্রথমার্ধে ঢাকায় এসে অন্তত ১৬টি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইগার উইলিঙ্গা বলেন, “বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে আমরা গভীর আগ্রহী।”

গভর্নর মনসুর বলেন, “আমরা লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের দিকে নজর দিচ্ছি এবং ইতিমধ্যে বেশ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। যতটা সম্ভব অর্থ এই উৎস থেকেই সংগ্রহ করতে চাই।”

এদিকে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, এই অভিযান রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কৌশল। দলের কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অধ্যাপক ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com