• সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ০৮:০৫

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে কেন বিক্ষোভ, কী আছে অধ্যাদেশে?

প্রতিনিধি: / ১১ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধন করে নতুন যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-কে তারা ‘নিবর্তনমূলক’ ও ‘কালাকানুন’ আখ্যা দিয়ে এর প্রত্যাহার দাবি করছেন। টানা তিন দিন ধরে সচিবালয়ে চলছে বিক্ষোভ ও সমাবেশ। অধ্যাদেশটিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা তাদের মৌলিক অধিকার ও কর্মপরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদিত হয়।  রোববার সন্ধ্যায় এটি চূড়ান্তভাবে জারি করা হয়। সোমবার (২৬ মে) টানা তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনের সামনে সমবেত হন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ’-এর ব্যানারে তারা এই আইন বাতিলের দাবি জানান।

অধ্যাদেশে চারটি প্রধান বিষয়কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে:
১. অনানুগত্য: কোনো কর্মচারী কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করলে বা সহকর্মীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করলে।
২. অনুপস্থিতি: যৌথ বা এককভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকা (ছুটি বা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া)।
৩. প্ররোচনা: অন্য কর্মচারীদের কাজে বিরত থাকতে বা কর্তব্যে অবহেলা করতে উৎসাহিত করা।
৪. বাধা সৃষ্টি: সহকর্মীদের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেওয়া।

অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে:
– পদোন্নতি স্থগিত বা নিম্নপদে অবনমন
– চাকরি থেকে অপসারণ
– সম্পূর্ণ চাকরিচ্যুতি (বরখাস্ত)

অভিযুক্ত কর্মচারীকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হবে। তবে শাস্তি নির্ধারণের আগে দ্বিতীয়বারের মতো সাত দিনের নোটিশ দেওয়া হবে। আপিলের সুযোগ থাকলেও রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল করা যাবে না। এসব বিধানকে ‘একতরফা’ ও ‘অসাংবিধানিক’ বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা।

কর্মচারীদের প্রধান আপত্তি
– মৌলিক অধিকার হরণ: বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে।
– নিরাপত্তাহীনতা: কর্তৃপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী যে কাউকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব।
– আইনের অপব্যবহার: রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে ব্যবহার হতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সংশোধনী শৃঙ্খলা রক্ষা ও সরকারি কাজের গতিশীলতা বাড়াতে প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে কর্মচারীদের আশঙ্কা, এটি দিয়ে বৈধ আন্দোলন ও মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হবে।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলবে। তারা আইনগত লড়াইয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে, সরকার এই বিষয়ে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com