• সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ০৭:৪৬

শিল্পখাতের ত্রাহি অবস্থা জ্বালানি সঙ্কটে

প্রতিনিধি: / ১৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

জ্বালানি সঙ্কটে দেশের শিল্পখাতের ত্রাহি অবস্থা। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে বিনিয়োগ. কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়। তীব্র গ্যাস সঙ্কটে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ভালুকা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ সব প্রধান শিল্পাঞ্চলেই গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ফলে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, সিরামিক ও স্টিল খাতসহ বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে দিনে দেশের এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ থাকে না। যদিও রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি থাকে গ্যাসের চাপ। ফলে শিল্প-কারখানায় ওই সময় উৎপাদন চলছে। বাকি সময় শ্রমিক-কর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। আর দিনভর যন্ত্রপাতি বন্ধ রেখে রাতের শিফটে উৎপাদন চালু রাখার কারণে দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয় বেড়ে গেছে। যদিও কিছু শিল্প সিএনজি, এলপিজি বা ডিজেল দিয়ে উৎপাদন ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটি ব্যয়বহুল। শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জ্বালানি সঙ্কটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানই নির্ধারিত সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের রপ্তানিপণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। বাধ্য হয়েই অনেক শিল্পোদ্যোক্তা চাহিদা থাকলেও রপ্তানি কার্যাদেশ নেয়া বন্ধ বা কমিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাব রপ্তানি আয়ে পড়েছে। ফলে গত মার্চের চেয়ে এপ্রিলে রপ্তানি আয় প্রায় ১২৩ কোটি ডলার কমেছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় ১২শ’র বেশি কারখানা রয়েছে। কিন্তু তিতাসের গ্যাস সরবরাহ যথেষ্ট না হওয়ায় ওই কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ ১ থেকে ৩ পিএসআইয়ে কমে এসেছে। অথচ প্রয়োজন ১৫ পিএসআই। ফলে জেনারেটর চালু করা যাচ্ছে না, বয়লার গরম করা যাচ্ছে না। এমনকি প্রায় সময় ড্রায়ার মেশিন বন্ধ থাকায় সময় মতো তৈরি পোশাক ওয়াশও করা যাচ্ছে না।  গ্যাস না পেয়ে কোনো কোনো কারখানা ডিজেল দিয়ে মেশিন চালাচ্ছে। তাতে মাসে বিপুল টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না। এখন পরস্থিতি এমন লোকসান দিয়েও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা উদ্যোক্তাদের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

সূত্র আরো জানায়, দৈনিক দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট। সর্বশেষ গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৬৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ১০৪ কোটি ঘনফুট ব্যবহৃত হয়, সাড়ে ১২ কোটি সার কারখানায় আর  শিল্প ও আবাসিকে যায় ১৫১ কোটি ঘনফুট গ্যাস।  বর্তমানে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে মাত্র ১৮৮ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। চার বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ দেশীয় উৎপাদন প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস কমেছে। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ মোটামুটি স্থিতিশীল রাখতে হলে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরতা  বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। দেশে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ দেশীয় উৎস ও আমদানি মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা কমে গিয়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটেরও কম দাঁড়িয়েছে। শিগগিরই এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নেই। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বকেয়া পরিশোধ করে গ্যাস উৎপাদন ও এলএনজি আমদানিতে কিছুটা গতি আনলেও সার্বিক চাহিদা বিবেচনায় তা যথেষ্ট নয়। বর্তমানে জ্বালানি ও বিদ্যুতে যেভাবে নীতি সাজানো হচ্ছে এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার তা সুসংহতভাবে এগিয়ে নিলেও সংকট দূর করতে কমপক্ষে ৩-৪ বছর লাগবে।

এদিকে গ্যাসের দাম গত কয়েক বছর ধরে যখনই বাড়ানো হয়েছে, তখনই সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলো স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির কথা বলেছে। কিন্তু দাম বাড়লেও উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়েনি। ২০২৩ সালে সরকার গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ায়। আর চলতি বছর আবার ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে বর্তমান সরকার। তারপরও সংকট কাটেনি।

অন্যদিকে সম্প্রতি শিল্পপতিদের সঙ্গে এক বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামলাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছিল। এখন বিদ্যুৎ থেকে নিয়ে হলেও শিল্পে সরবরাহ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com