সর্বশেষ :
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

পিকেকে’র অবসান – চার দশকের রক্তাক্ত অধ্যায়ের ইতি টানছে কুর্দি গেরিলারা

প্রতিনিধি: / ১২২ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কের ইতিহাসে দীর্ঘতম ও অন্যতম রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ঘোষণা দিয়েছে তারা অস্ত্র সমর্পণ করে সংগঠন বিলুপ্ত করছে। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে চার দশকের সংঘাতের এক ঐতিহাসিক অধ্যায় শেষ হতে যাচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে পিকেকে’র কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালান তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠিতে দল বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই আহ্বানের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দলটি নিজেদের ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সশস্ত্র লড়াই পরিত্যাগ এবং সংগঠন গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
পিকেকে’র এই সিদ্ধান্ত এসেছে দলটির কংগ্রেসের পরপরই। সেখানে ওজালানের দর্শন ও প্রস্তাবের আলোকে একটি বিস্তারিত বিবৃতি পাঠ করা হয়। বিবৃতিতে জানানো হয়, কুর্দি জনগণের সমস্যা এখন থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমেই সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
১৯৮০ সালে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে পিকেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আলাদা রাষ্ট্রের দাবি থেকে সরে এসে কুর্দিদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি ও স্বায়ত্তশাসনের দিকে মনোযোগী হয়। এই দীর্ঘ সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।
তুরস্ক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকা ওজালান ১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণপশ্চিমের একটি দ্বীপে বন্দি রয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুতে ওজালান তার বার্তায় বলেন, “রাজনৈতিক লক্ষ্যের বাস্তবায়নে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক ঐকমত্যই কুর্দি জাতির মুক্তির পথ।”
বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্ক ও আশপাশের অঞ্চলে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর তুর্কি সেনাবাহিনীর কঠোর দমননীতির সফলতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে পিকেকে’র অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়া – এসব কারণেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দলটি।
ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থানকারী পিকেকে-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমও সীমিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ধারণা করা হচ্ছে, এই শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাধ্যমে ওজালান তার মুক্তির পথ সুগম করতে চাইছেন।
পিকেকে’র বিলুপ্তির ঘোষণা এমন সময়ে এল যখন তুরস্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ জমে উঠছে। ২০২৮ সালের সেই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান পুনরায় প্রার্থী হতে চাইলে কুর্দিপন্থি দলগুলোর সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এরদোয়ানের দল একে পার্টি ইতোমধ্যেই পিকেকে’র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক’-এর পথে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে, অস্ত্র সমর্পণ এবং দল বিলুপ্তির প্রক্রিয়া যেন রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণে হয়।
এখন প্রশ্ন উঠছে-পিকেকে’র বিলুপ্তির বিনিময়ে কী কিছু পাবে দলটি? যদিও এখনও এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি, তবে কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, ওজালান জামিনে মুক্তি পেতে পারেন কিংবা পিকেকে-সমর্থিত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কিছু মামলা প্রত্যাহার হতে পারে।
এছাড়া সংগঠনটি শান্তি আলোচনার জন্য একটি আইনি কাঠামো গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে। যদি এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়, তবে তা কুর্দি জনগণের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিতে পারে।


এই বিভাগের আরো খবর