সর্বশেষ :
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে উত্তাল বাংলাদেশ রাজপথে শিক্ষার্থী, জনতা ও নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ

প্রতিনিধি: / ১৩২ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম গণহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার দেশের রাজধানীসহ প্রায় সব জেলায় শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতীকী ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়। “ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা” কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা ওইদিন কোনো একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। সকাল থেকেই রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম বদরুন্নেসা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল ও মানববন্ধনে অংশ নেন। । তারা “ফ্রি ফিলিস্তিন”, “নো মোর ইসরায়েল”ইত্যাদি স্লোগান দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রাজু ভাস্কর্য এবং টিএসসি চত্বরে মিছিলের ঢল নামে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে মিছিল আসতে থাকে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রাজপথে স্লোগান ওঠে, “ট্রাম্পের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে”, “ইনকিলাব ইনকিলাব, আল-আকসা জিন্দাবাদ”, “ইসরায়েল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানায়, কর্মসূচির প্রতি সম্মান জানিয়ে সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এদিকে বেগম বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা “শো ইসরায়েল দ্য রেড কার্ড”লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে অংশ নেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা শুধু একটি রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি চরম মানবিক বিপর্যয়।” বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে একদল তরুণ। দূতাবাসের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার ফলে সাময়িকভাবে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মানবপ্রাচীর তৈরি করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। ঘটনাস্থলে ছিলেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাজধানীর বাইরেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যাপক গণসমাগম হয়। কুড়িগ্রাম শহরের শাপলাচত্বর থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে ফিলিস্তিন সংহতির মিছিল। একই সময় কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন। ময়মনসিংহে টাউন হল মোড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষ। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলÑ“গাজায় হত্যা বন্ধ কর”, “ইসরায়েলের বর্বরতার বিচার চাই”। খাগড়াছড়ি জেলার নয়টি উপজেলায়Ñসদর, মাটিরাঙা, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, দিঘিনালা, পানছড়ি, গুইমারা, রামগড়Ñবিক্ষোভে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বক্তারা ফিলিস্তিন ভূমি দখলের চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। কাঁঠালিয়ায়, শহরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ শিক্ষাচত্বর মোড়ে জড়ো হয়ে রাজপথ দখল করে নেয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ হয় দীর্ঘ সময় ধরে। স্লোগানে মুখর হয় পুরো এলাকাÑ“ইসরায়েলি পণ্য বর্জন কর”, “গণহত্যার বিচার কর”। গোয়ালন্দ উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ। অংশগ্রহণ করে শত শত মানুষ। শেষে কোর্ট মাঠে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় ফিলিস্তিনের শহীদদের স্মরণে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও প্রতিবাদ ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তারা দাঁড়ায় প্ল্যাকার্ড হাতে। শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক একত্রে মানববন্ধনে বলেন, “এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।” বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, “এই মুহূর্তে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো যথেষ্ট নয়, সময় এসেছে রাস্তায় দাঁড়াবার, সরব হবার। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইÑমানবতার পাশে, নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে।


এই বিভাগের আরো খবর