আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগামী ২৮ এপ্রিল কানাডায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সম্প্রতি এই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার শপথ গ্রহণের মাত্র নয় দিনের মাথায় এই সিদ্ধান্ত এসেছে, যা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে।
নির্বাচনের ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি তীব্র বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন বড় এক রাজনৈতিক ইস্যুেত পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্নি তার ঘোষণায় বলেন, ‘‘ট্রাম্পের অন্যায্য বাণিজ্যিক নীতির কারণে আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় কানাডার জনগণের কাছে শক্তিশালী জনমত নেওয়া জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “আমি গভর্নর জেনারেলকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেছি, যা ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। এখন সময় কানাডার জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।’’
নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কার্নি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে।
কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভ্রে লিবারেল পার্টির প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘ট্রুডোর দশকব্যাপী ব্যর্থ নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যেতে চান কার্নি। লিবারেলদের নীতি কানাডাকে দুর্বল করে তুলেছে। তারা অভিবাসন ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশকে বিপদে ফেলেছেন।’’
অন্যদিকে, কার্নি তার প্রচারণায় মূলত কানাডার সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে এবং দেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ট্রাম্প যতদিন আমাদের সার্বভৌমত্ব স্বীকার না করবেন, আমি তার সঙ্গে দেখা করব না।’’
ট্রাম্পের নেওয়া বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই কানাডার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। কানাডার পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, যা দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডা ৬ হাজার কোটি কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্বাচন শুধু কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য নয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
কানাডার নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটাররা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন না। তারা পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচন করেন, আর যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পায়, সেই দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী হন। লিবারেল ও কনজারভেটিভদের পাশাপাশি নিউ ডেমোক্র্যাটস (এনডিপি), ব্লক ক্যেবেক, গ্রিন পার্টি ও পিপলস পার্টি অব কানাডাও এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।