টাইব্রেকারে নির্ধারিত ৫টি শট শেষ। দুই দল তখন ৩-৩ সমতায়। এরপরই টাইব্রেকারে প্রবেশ করে সাডেন ডেথে। মিস করলেই শেষ, আর সুযোগ পাবে না। এমন পরিস্থিতিতে স্নায়ু ধরে রাখাই কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই করলেন ফ্রান্স গোলরক্ষক মাইকমাইগনান। ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার ইয়োসিক স্টানিসিকের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে মেতে ওঠে ফ্রান্স ফুটবলাররা, ৫-৪ গোলের ব্যবধানে জয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ক্রোয়েশিয়ার মাঠে গিয়ে ২-০ ব্যবধানে হেরে এসেছিলো ফরাসিরা। ফিরতি লেগে অন্তত ৩ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। রীতিমত অসাধ্য কাজ। তবুও ঘরের মাঠ স্টেডে ডি ফ্রান্সে স্বাগতিক সমর্থকরা আশায় বুক বেধে এসেছেন, কিলিয়ান এমবাপেরা যদি অসাধ্য সাধন করতে পারে! সেই অসাধ্য সাধন হয়েছে, তবে তা টাইব্রেকারের মাধ্যমে। তার আগে ২-০ গোলের জয় দিয়ে শেষ করেছিল ফ্রান্স। জিতলেও ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোর কারণ, দুই লেগে দুই দলেরই গোল সমান ২-২। যার ফলে ম্যাচ গড়িয়েছিলো অতিরিক্ত সময়ে। মোট ১২০ মিনিটের খেলায়ও আর কেউ গোল করতে পারেনি। ফলে সেমিফাইনালের দল নির্ধারণে টাইব্রেকারে ছাড়া উপায় ছিল না। নির্ধারিত সময়ে ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন মিকায়েল ওলিসি এবং ওসমান ডেম্বেলে। প্রথমার্ধে কেউ কোনো গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই, ম্যাচের ৫২তম মিনিটে মিকায়েল ওলিসি প্রথম ক্রোয়েশিয়ার গোলের তালা খোলেন এবং জালে বল জড়ান। ৮০ মিনিটের সময় দ্বিতীয় গোল করেন ওসমান ডেম্বেলে। পুরো ম্যাচে একক আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে ফ্রান্স। তাদের বল দখলের পরিমাণ ছিল ৬২ ভাগ। ক্রোয়েশিয়ার ৩৮ ভাগ। সব মিলিয়ে ফ্রান্স ২২টি সুযোগ তৈরি করেছিলো গোলের। যার মধ্যে মাত্র ২টি কাজে লাগাতে পেরেছে। অন্যদিকে ১২০ মিনিটের খেলায় ক্রোয়াটরা গোলের একটি সুযোগও তৈরি করতে পারেনি। টাইব্রেকারে প্রথম শট নেন এমবাপে। বল জড়ায় ক্রোয়েশিয়ার জালে। ক্রোয়াটদের প্রথম শট নিতে আসেন মার্টিন বাটুরিনা। তার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন ফ্রান্স গোলরক্ষক মাইক মাইগনান। দ্বিতীয় শটে দুই দলই গোল করে। ফ্রান্সের অরিলিয়েন চুয়ামেনি এবং ক্রোয়েশিয়ার নিকোলা মোরো শট নেন। তৃতীয় শট দুই দলই মিস করে। ফ্রান্সের হুলেস কুন্দে এবং ক্রোয়েশিয়ার ফ্রাঞ্জো ইভানোভিচ- দু’জন তাদের শটকে পাঠিয়ে দেন গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। চতুর্থ শটে গোল করে দু’দলই। ফ্রান্সের কোলো মুয়ানি এবং ক্রোয়েশিয়ার মারিও প্যাসালিক নেন চতুর্থ শট দুটি। পঞ্চম শট মিস না করলেই সেমিতে ফ্রান্স। কিন্তু নাটক যে তখনও বাকি! থিও হার্নান্দেজ শট মিস করেন। বাম পাশের কর্নার দিয়ে বল চলে যায় বাইরে। ক্রোয়েশিয়ার ক্রিশ্চিয়ান ইয়াকিক গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-৩। খেলা গড়ায় সাডেন ডেথে। ৬ষ্ঠ শট নেন ফ্রান্সের ডিজায়ার দুয়ে এবং ক্রোয়েশিয়ার দুয়ে ক্যালেটা-কার। দু’জনের শটই জালে জড়ায়। ৪-৪। সপ্তম শটে দায়ত উপামেকানো গোল করেন এবং ক্রোয়েশিয়ার ইয়োসিক স্টানিসিকের শট ঠেকিয়ে দেন ফ্রান্স গোলরক্ষক মাইক মাইগনান।
ছবি:০৮
নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমির টিকেট পেলো স্পেন
প্রথম লেগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের রটারডামে ২-২ গোলে ড্র করে এসেছিলো স্পেন। ঘরের মাঠে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছিলো লামিনে ইয়ামালরা। কিন্তু এখানেও সেই সমতা। দুই দল মিলে ৬টি গোল দিলো। কিন্তু কেউ জিততে পারলো না। শেষ পর্যন্ত ১২০ মিনিটের খেলা শেষ ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে সাডেন ডেথে গিয়ে ডাচদের ৫-৪ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়ন চ্যাম্পিয়ন স্পেন। সেমিফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্সের। স্পেনের হয়ে এই ম্যাচে জোড়া গোল করেন মিকেল ওইয়ারজাবাল, অন্য গোলটি করেন লামিনে ইয়ামাল। নেদারল্যান্ডসের হয়ে গোল করেন মেমফিস ডিপাই, পেনইয়ান মাতসেন ও জাভি সিমোন্স। টাইব্রেকারে স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসের হয়ে প্রথম তিন শটেই গোল হয়েছে। স্পেনের হয়ে গোল করেন মিকেল মেরিনো, ফেরান তোরেস, অ্যালেক্সি গার্সিয়া। নেদারল্যান্ডসের হয়ে গোল করেন ভিরগিল ফন ডাইক, তেউন কুপমেইনার্স, জাভি সিমিওনে। চতুর্থ শটই মিস করেন স্পেনের লামিনে ইয়ামাল, নেদারল্যান্ডসের নোয়া ল্যাঙ। পঞ্চম শটে গোল করেন স্পেনের অ্যালেক্স বায়েনা ও নেদারল্যান্ডসের কেনেথ টেলর। ৬ষ্ঠ শটে গোল করেন স্পেনের পেদ্রি। নেদারল্যান্ডস ডেনিল মালেন শট মিস করেন।