আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এক ভারতীয় নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শাহজাদি খান নামের ওই নারীকে ৪ মাসের একটি শিশু হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দেশটির আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই দণ্ড কার্যকর করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার (৩ মার্চ) দিল্লি হাইকোর্টকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। শাহজাদির পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা ও তথ্য জানতে আবেদন করা হলে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
শাহজাদি খান ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে এক ভারতীয় দম্পতির গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁকে দম্পতির নবজাতক শিশুটির দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর শিশুটির মৃত্যু হলে শাহজাদিকে দায়ী করা হয়। পুলিশ অভিযোগ করে যে শাহজাদি শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একই বছরের ৩১ জুলাই আবুধাবির একটি আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর আপিল খারিজ করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
শাহজাদির পরিবার তাঁর নির্দোষিতার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরে। তাঁদের দাবি, শিশুটির মৃত্যুর কারণ ছিল ভুল টিকা দেওয়া। শাহজাদি শিশুটির মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন না এবং তাঁকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। পরিবার আরও অভিযোগ করে যে, বিচারকালে শাহজাদিকে যথাযথ আইনি সহায়তা দেওয়া হয়নি। শাহজাদির বাবা শাব্বির খান বলেন, “আমার মেয়ে ন্যায়বিচার পায়নি। আমরা সর্বত্র চেষ্টা করেছি, কিন্তু আবুধাবিতে আইনজীবী নিয়োগের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না।”
শাহজাদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহজাদি কারাগার থেকে শেষবারের মতো পরিবারকে ফোন করেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমাকে একটি পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। আমি জীবিত অবস্থায় বের হব না। এটিই আমার শেষ ফোন হতে পারে।” এরপর পরিবার আর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায় যে, ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহজাদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এবং ৫ মার্চ তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
ভারত সরকার শাহজাদির পক্ষে আইনি সহায়তা প্রদান করেছিল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনও পাঠানো হয়েছিল। তবে দেশটির আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শাহজাদিকে সমস্ত আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়েছে।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৫৪ জন ভারতীয় বিদেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ভুগছেন। এর মধ্যে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাতেই রয়েছেন ২৯ জন। ভারত সরকার এই সব মামলায় আইনি সহায়তা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।