রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন বাগেরহাটে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আ.লীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ

প্রতিনিধি: / ১৮৭ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এস এম রাজ,বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আ.লীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে
অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এনে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন, জেলা জুড়ে বিএনপির
ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পৌরসভার কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে অস্তিরতা
দেখা দিয়েছে। এবারই প্রথম কর্মীদের ভোটে নেতা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের
কমিটি নির্বাচন হচ্ছে। এসব কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় হামলা,
নেতাকর্মীদের মারধর, সংঘর্ষ ঘটনাও ঘটেছে। তৃনমূলের ত্যাগী নেতাদের বাদ
দিয়ে সদস্য সংগ্রহ, কমিটিতে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজনদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ
বিভিন্ন অভিযোগে দফায়-দফায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কচুয়া উপজেলার ধোপাখালি ইউনিয়ন বিএনপির
কমিটি গঠন নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে প্রতিপক্ষের
হামলায় ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মোঃ লিয়াকত হোসেনসহ
অন্তত ১৫জন গুরুত্বর আহত হয়। এদের মধ্যে লিয়াকতকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা
হাসপাতালে এবং দুইজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
একইদিন কমিটি গঠন নিয়ে চিতলমারী উপজেলায় কলাতলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড
বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চরচিংগুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
এলাকায় কিবির মাস্টার ও মোস্তাফিজুর রহমান কচির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন দলীয় নেতাকর্মী আহত হয়। এদিন ফকিরহাট
উপজেলার কাঠালতলা এলাকায়ও কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের
মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
এদিকে বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি
গঠন নিয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন ও
মানববন্ধন করে নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের সভাপতি পদে বিজয়ী প্রার্থী
আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আওয়ামী লীগের নেতা বলে দাবি করেছেন ওয়ার্ড বিএনপির
সভাপতি প্রার্থী আছাদুজ্জামান ও জাহাঙ্গীর মুন্সি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন
ওয়ার্ডে তদারকি কমিটির স্বাক্ষর ছাড়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফ্ফর
রহমান আলম আওয়ামী লীগের দোসর আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া ৭৭টি ভোটার
বৃদ্ধির অভিযোগ করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুনও সংবাদ সম্মেলন করে
আছাদুজ্জামানকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে দাবি করেছিলেন। পরে এলাকা বাসির
নেতৃত্বে কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
করেছে।
এর আগে গেল ২৫ জানুয়ারি মোংলা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কমিটির নির্বাচনের সময়
সংঘাতের সৃষ্টি হয়। যুবদলের কর্মীদের হামলায় আহত হন ২নং ওয়ার্ড বিএনপির
সভাপতি প্রার্থী কামাল ও তার ছেলে মুক্তাদিরসহ ৪ জন। এদিন দুপুরে  ৬নং
ওয়ার্ডের ব্যালট বাক্স ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে।
কচুয়া উপজেলার রাড়িপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদে নির্বাচন
করেছিলেন শেখ তন্ময়ের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মান্নান শেখ। যদিও
ভোটে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ
তন্ময়ের সেন্টার পুলিং এজেন্টদের কমিটির ৮ নম্বর সদস্য ছিলেন। কোথাও
কোথাও টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ অথবা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অংগ সংগঠনের
কমগুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাকর্মীদের বিএনপির সদস্য অথবা বিএনপির
কমিটিতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র কমিটি গঠনে
ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি শেখ মহিদুল
ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সক্রীয় সদস্যদেরকে ভোটার করা
হয়েছে। ভোটার তালিকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের অর্ন্তভ‚ক্ত করার অভিযোগ করে
গেল ২১ জানুয়ারি বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বাগেরহাট পৌর
সভার ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক প্রার্থী রায়হান মাহমুদ লিটু।
শুধু এসব ওয়ার্ডে নয়, জেলার অন্তত ১০০টি ওয়ার্ডে বিএনপির কমিটিতে আওয়ামী
লীগের আস্থাভাজন, কোথাও সরাসরি আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগীরা স্থান পেয়েছেন
বলে অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের।বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনও স্থগিত
করা হয়েছে।
এর আগে সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য
ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক
রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বর ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর
রহমানের লোকদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। গেল ৮ জানুয়ারি হামলা, ও
অগ্নিসংযোগ এর মত ঘটনা ঘটে। এর বাইরে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে বাগেরহাট
সদর ও কচুয়া উপজেলা বিএনপির কমিটি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। বাগেরহাট
সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শেখ আবুল
কালাম আজাদ বুলু সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এটিএম আকরাম
হোসেন তালিম ও সদস্য সচিব মোজাফফর রহমান আলমের বিরুদ্ধে খেয়াল খুশি মতো
কমিটি ঘোষণা করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলস করেন । পরে জেলা বিএনপি’র
আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিমও পাল্টা সংবাদ
সম্মেলন করে নিজেদের কাজকে সাংগঠনিক দাবি করেছিলেন।
এছাড়া কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়ার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা
ও জেলার নেতৃবৃন্দের মধ্যেও বিভেদ রয়েছে। মূলত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর
থেকে পদপদবী ও কমিটি নিয়ে নেতাদের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দেয়। জেলা
বিএনপি’র সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের বিরুদ্ধে শরণখোলা উপজেলা
বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন। পরে এর প্রতিবাদে শিপনের
সমর্থকরা কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম-আহবায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির,
জেলা বিএনপির সদস্য এ্যাড. ফারাহানা জাহান নিপা ও বন্ধুদলের কেন্দ্রীয়
সভাপতি শরীফ মোস্তফা জামান লিটুর বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জে ঝাড়ু মিছিল করেছিল।
এছাড়া একে অপরের নামে বিষেদাগার এমনকি পক্ষে বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলনও
করেছেন নেতাকর্মীরা। এমনকি এডিট করে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ছবি
লাগিয়ে বিএনপির নেতাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে।
চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কাজী
শাহাজান বলেন, বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা শেখ
হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে এডিট করে তার ছবি লাগিয়ে বিএনপির ইউনিয়ন তদারকি
কমিটির সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এভাবেই নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছ
থেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিএনপির ত্যাগী নেতারা।
এভাবে চলতে থাকলে দলীয় শৃক্সখলা ভেঙ্গে পড়বে। যার প্রভাব পরবর্তী জাতীয়
নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করেন তৃনমূলের কর্মীরা।
বাগেরহাট পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক প্রার্থী রায়হান
মাহমুদ লিটু বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা আওয়ামী লীগের
মিছিল-মিটিং এ নেতৃত্ব দিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশে থেকে নানা নরকম
সুযোগ সুবিধা নিয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে তাদের বিএনপির কমিটিতে স্থান দেয়া
হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দলীয় শৃক্সখলা ভেঙ্গে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, দলের যখন দূর্দিন ছিল,
তখন পদ দেওয়ার মত লোক ছিল না। এখন পদের জন্য মারামারি করছে। পদ বেঁচাকেনা
হচ্ছে। এর প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পরবে দল ও নির্বাচনের জন্য ত্যাগী
নেতাদের প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।
সব শেষ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়রি) দুপুরে রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড়
ইউনিয়ানের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নাম
থাকায় ইউনিয়ন বিএনপির  সাবেক সভাপতি আলিম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক
হুমায়ুন কবির খানসহ শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন সংবাদ
সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের
নেতাকর্মীরা বিএনপির ভোটার হয়েছেন বিষয়টি জানাজানি হলে বিএনপির
নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতে নতুন
করে ভোটার সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২য় বারও ভোটার সংগ্রহে
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সদস্য করা হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে জেলা
বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমন অবস্থায় আমরা
নিরুপায় হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন,
যারা এতদিন সৈরাচারের সাথে ছিল, তারা বিভিন্নভাবে আমাদের দলে প্রবেশের
চেষ্টা করছেন। দলের প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা গনতান্ত্রিক
প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠন শুরু করেছি। এটা বাংলাদেশ
প্রথম, কোন রাজনৈতিক দল কর্মীদের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করছে।
যেহেতু প্রক্রিয়াটি নতুন, বিএনপি বড় দল এবং অনেকগুলো ইউনিটের কমিটি
হচ্ছে, যার কারণে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। আসা করি এসব জটিলতা নিরসন
করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা প্রতিটি ইউনিটে একটি সুন্দর কমিটি উপহার
দিতে পারব।
তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপির কমিটিতে যদি
কোনভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক বা কোন নেতা ভুলবসতও স্থান পায়, তাহলে যখনই
জানা যাবে তখনই তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানান এই নেতা।
দলীয় সূত্রে জানাযায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বাগেরহাটের
৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা, ৭৫টি ইউনিয়ন ও ৭০২টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের
প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।


এই বিভাগের আরো খবর