ধর্ম: শরিয়তের নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে পশুপাখি ভাড়া নেওয়া জায়েজ। সাধারণত অন্যান্য বিষয়ের ভাড়া বা ইজারার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত প্রযোজ্য, পশুপাখি ভাড়া আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেও শর্তগুলো প্রযোজ্য। যেমন-শুধু উপকার ভোগের শর্ত করা, মূল বস্তু নিঃশেষ বা ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া, চুক্তির মেয়াদ ও ভাড়া নির্ধারিত হওয়া, মূল বস্তু হস্তান্তরযোগ্য ও মূল্যবান হওয়া এবং মূল বস্তু, তার উপকার (যে কাজে ব্যবহার হবে তা) ও ভাড়ার বিনিময় শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হওয়া ইত্যাদি। ইসলামী আইন গবেষকরা বলেন, কুকুর, ঘোড়া বা এমন জীবজন্তু নিরাপত্তার কাজের জন্য ভাড়া নেওয়া জায়েজ। তবে হানাফি মাজহাবে তা বৈধ নয়। তাদের যুক্তি হলো ঝগড়া-বিবাদ ও হামলার সময় নিরাপত্তা বিধান করার ব্যাপারে জীবজন্তুর সাফল্য নিশ্চিত নয়। আর অনিশ্চিত বিষয়ের ওপর কোনো চুক্তি শরিয়তে বৈধ নয়। কোনো মাদি প্রাণীর গর্ভধারণের জন্য নরজন্তু ভাড়া নেওয়া বেশির ভাগ ফকিহের মতে নাজায়েজ। কেননা বিশুদ্ধ হাদিসে নবীজি (সা.) থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে পরবর্তীকালের কোনো কোনো আলেম বলেছেন, যদি নরজন্তু ভাড়া করে গর্ভধারণ করা না হলে এই প্রাণীর বংশবিলুপ্তির আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা প্রয়োজন হিসেবে ভাড়া করা জায়েজ। তবে নরপশুর মালিকের জন্য গর্ভসঞ্চার কাজের বিনিময়ে ভাড়া নেওয়া জায়েজ হবে না। অর্থাৎ প্রয়োজন পূরণের জন্য মাদি পশুর মালিক পুরুষ পশু ভাড়া নিলে, অর্থ ব্যয় করলে সেটা তার জন্য বৈধ হবে, কিন্তু নরপশুর মালিকের জন্য বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ হবে না। ফকিহ আলেমরা বলেন, কোনো মুসলিম যদি গর্ভসঞ্চার করার জন্য নরপশু ব্যবহার করার জন্য মাদি পশুর মালিককে বিনা মূল্যে সুযোগ দেয়। কিন্তু তার এই সৌজন্যবোধের বিপরীতে উপকারভোগীরা যদি তাকে স্বেচ্ছায় কোনো অর্থ বা উপহার দেয় তা গ্রহণে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বেশির ভাই ইসলামি আইন গবেষক বলেন, জীবজন্তুর ইজারা যদি কোনো দ্রব্য বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, যেমন-কোনো ছাগল ভাড়া নিয়ে সেটির দুধ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এই ভাড়া চুক্তি বৈধ হবে না। কেননা ইজারার মূল হলো কোনো বস্তুর উপকার লাভ করা, কোনো বস্তু ভোগ করা নয়। চিঠি পাঠানোর জন্য কবুতর ভাড়া করা যাবে কি না তা নিয়ে আইন গবেষকদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। কেউ কেউ বলেছেন, কবুতর এই কাজে প্রশিক্ষিত হলে তা ভাড়া করা যাবে। আর অন্যরা বলেছেন, নিরাপদে চিঠি নির্ভুল গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কবুতরের ভুলত্রæটি প্রমাণিত। তাই চিঠি পাঠাতে কবুতর ভাড়া করা যাবে না। সর্বসম্মতিক্রমে নিজে আরোহণ করা বা মালপত্র পরিবহন করার জন্য জীবজন্তু ভাড়া করা জায়েজ। একইভাবে কৃষিকাজের জন্য ও ঘানি চালানোর পশু ভাড়া করা জায়েজ। এ ক্ষেত্রে কে কে আরোহণ করবে, কতটা পথ অতিক্রম করবে, পশুর ওপর কী পরিমাণ বোঝা ওঠানো হবে অথবা তার মাধ্যমে কী পরিমাণ কৃষিকাজ করানো হবে তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। পশুর মালিকের জন্য পশুর জীবননাশ বা অঙ্গহানি হয় এমন কাজে তাকে ভাড়া দেওয়া জায়েজ হবে না। পশু ভাড়া নেওয়ার পর যদি ভাড়াগ্রহীতা চুক্তির শর্ত মোতাবেক তা ব্যবহার করে, কিন্তু তার পরও পশুর কোনো ক্ষতি হয় তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। অন্যদিকে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে সে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। সাধারণ নিয়ম হলো জীবজন্তু যে ভাড়া নেবে সে খাবার ও তা পরিচর্যার খরচ বহন করবে। আর মালিক চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে। তবে পরিস্থিতি ও সামাজিক প্রচলনের ভিত্তিতে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে পশুর খাবার ও পানীয় কে দেবে তা নির্ধারণ করার অবকাশ রয়েছে। খাবারের দায়িত্ব যদি ভাড়া গ্রহীতার দেওয়ার কথা থাকে, তবে তার ওপর মধ্যমমানের খাবার প্রদান করা আবশ্যক।