বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

গল্প, “ভালোবাসার আবির”

প্রতিনিধি: / ২০৬ দেখেছেন:
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

খেতে বসে ভাতের থালায় মাঝে মধ্যেই চুল পাওয়াটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। যেদিন খেতে বসে ভাতের থালায় কালো চুলের বদলে একটা সাদা চুল পেলাম কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি হতবাক হয়ে গেলাম। একসাথে সংসার করতে করতে আমার রানিটার মাথার সেই কালো কুচকুচে চুল, যে চুল দেখে মুগ্ধ হয়ে থাকতাম, যে চুলের ঘ্রাণ আমার পুরো শরীরকে শান্তি দিত সেই কালো চুল আজ সাদা হয়ে গেছে।
ভাতের থালাটা সরিয়ে রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম নিজেকে। দেখি আমার মাথার চুল ঝড়ে গিয়ে টাক পরেছে, আর পিছনের গুটি কয়েক চুলে সাদার আভা। শরীরের সেই টান টান চামড়া আজ ঢিলে হয়ে গেছে।
পিছন থেকে নিরার ডাকে আমার চিন্তা জাল ছিন্ন হল। সে বলল- “কি গো খাওয়া ছেড়ে হঠাৎ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি দেখছ!”
আমি জবাব দিলাম- নিজেকে দেখছি নিরা।
নিরা- নিজেকে কি দেখছ আবার!
আমি নিরাকে সামনে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে গলায় একটা চুমু দিয়ে বললাম- দেখছি কীভাবে তোমার সঙ্গে সংসার করতে করতে বুড়ো হয়ে গেলাম বুঝতেই দিলে না তুমি।
নিরা- কি যে বলো! কে বলেছে তুমি বুড়ো! তুমি এখনো আমার সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা যার দিকে আমি তাকিয়ে থাকতাম আর মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।
আমি- সত্যি কীভাবে ৪৫ টি বছর পেরিয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।
নিরা- মনে পরে তোমার সেই দিনের কথা আমাকে পার্কে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেছিলে।
সেই দিনের স্মৃতি গুলো আমার মনে ঝলক দিয়ে গেলো। নিরা বসে ছিল পার্কের বেঞ্চে আর আমি হাঁটু গেড়ে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেছিলাম ওকে। খুব মনে পরছে তার লজ্জাময় মুখটা।
আমাদের কাছে আসার লড়াইটা সত্যি সহজ ছিল না। সব থেকে বেশি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল কাস্ট সমস্যা। দুই পরিবার কিছুতেই মেনে নিচ্ছিল না আমাদেরৃ
বলছি যখন তাহলে আমাদের লাভ স্টোরিটা প্রথম থেকেই বলি-
নিরার সঙ্গে আমার পরিচয়টা হয়েছিল কলেজের টেলিগ্রাম গ্রæপের মাধ্যমে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে জানতে চেয়েই আমাদের পরিচয়। এখানে বলে রাখি আমি কিন্তু নিরার চেয়ে দুই বছরের বড়।
আমি যখন তৃতীয় বর্ষে সে তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এরপর গ্রæপে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনায় একে অপরের কাছে আসতে চাওয়া। যেহেতু তাদের ক্লাসের সময় আর আমাদের ক্লাসের সময় আলাদা আলাদা আমরা কখনোই একে অপরকে সামনে থেকে দেখিনি।
যাই হোক, এরপর ধীরে ধীরে টেলিগ্রাম থেকে ডযধঃংঅঢ়ঢ় -এ দুইজনের কথা শুরু। কথা বলতে বলতে আরও কাছে আসা আর এরপর আমাদের অনলাইনে প্রপোজ।
এরপর আমরা ঠিক করি দেখা করব। প্রথম দেখা হওয়ার সেই অনুভ‚তি অতুলনীয়। প্রথম দেখতেই বুকে ঢেউ খেলে গিয়েছিল শরীরে একটা তরঙ্গ প্রবাহিত হয়ে যায়।
সেদিন আসার সময় তার গালে চুমু দিই, সেই চুমু আমি আজও ভুলতে পারিনা। যখনই মনে পরে আপ্লুত হয়ে যাই নিজেই।
এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুটো বছর। কলেজ শেষ হওয়ার পর নিরার উপর বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ আসা শুরু হল। এদিকে আমি তখন বেকার যুবক।
একদিন রাতে ফোনে নিরা প্রচুর কান্না করে সে জানায়, আমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। যে করেই হোক আমাকেই তার চাই। বিশ্বাস করবেন, আমাকে পাওয়ার জন্য সে অনেক বড় বড় চাকরি করা ছেলের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে, এমনকি সে কাউকে ঘরে পর্যন্ত আসতে দেয়নি।
ভাবতেও অবাক লাগে, ঠিক কতটা ভালোবাসলে একজন বেকারের জন্য নিরা এত এত চাকরি করা ছেলেকে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছে।
এরপর আমি ঠিক করি যেভাবেই হোক আমাকে একটা চাকরি জোগাড় করতেই হবে। শুরু করলাম পড়াশোনা। আর এই পড়াশোনার সময়টাতে সবসময় তাকে সাথে পেয়েছি আমি। নোট বানিয়ে দিয়ে, বলে বলে সেটাকে মুখস্থ করিয়ে নেওয়া প্রতিদিন রাতে আমাকে পড়া ধরা এমনকি কোন সময় কি পড়ব সব ঠিক করে দিয়েছিল সে।
এরপর এক্সাম ক্লিয়ার। আমার এক্সাম ক্লিয়ার এর খবর শুনে আনন্দে প্রচুর কেঁদেছিল মেয়েটা।
আমরা ভেবেছিলাম এরপর হয়ত আমাকে মেনে নেবে নিরার পরিবার। নিরা আমার কথা বাড়িতে জানায়।
কিন্তু আমাদের মেনে নেয়নি নিরার বাবা। নিরার কাছে তখন দুটি রাস্তা, হয় আমি নাহয় তার পরিবার। বাবাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেও যখন নিরা ব্যর্থ হল তখন নিরার মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আমরা বিয়ে করি।
এদিকে আমার বাবা নিরাকে মেনে নিতে নারাজ। পরিবারের দোহাই দিয়ে নিরা যেমন আমাকে না ছেড়ে আঁকড়ে ধরেছিল আমিও সেটিই করলাম।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ডাক পরল নিরার বাড়িতে। শুনলাম নিরার বাবা আমাদের মেনে নিয়েছে। এদিকে নিরার বাবা মেনে নেওয়ার কিছুদিন পরেই আমার বাবাও আমাদের মেনে নেয়।
মহাধুমধাম করে বিয়ে হয় আমাদের। সত্যি সেদিন অনেক কেঁদেছি দুইজনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। যদি আমরা সেদিন একে অপরকে আঁকড়ে ধরে রাখার মত কঠিন সিদ্ধান্ত না নিতাম আজ হয়ত দুইজনেই কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ হতাম।
এদিকে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিরাও একটি চাকরি পেয়ে গেল। এরপর আমাদের সুখের সংসার। আর মাঝে কেটে গেল ৪৫ টা বছর।
আমাদের ছেলে মেয়ে দুইজনে আজ প্রতিষ্ঠিত। সব মিলিয়ে আমাদের সুখের সংসার।
নিরা- কি ভাবছ এত আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে!
আমি- ভাবছি, আমার এই টুকটুকে রানিটাকে নিয়ে একদিন আবার সেই পার্কে যাব। সেই পার্কে যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল আবারও মাখিয়ে দেবো নিজেদের ভালোবাসার


এই বিভাগের আরো খবর