চা বাগান আর পাহাড়ে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বাদশ আসর। মাঠের ক্রিকেটের উত্তাপের সঙ্গে টুর্নামেন্টের শুরুতেই আলোচনায় এসেছে দুই বন্ধুর মুখোমুখি লড়াই, ফ্র্যাঞ্চাইজি সংকট, কোচদের অসন্তোষ এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বিতর্ক আর প্রত্যাশার মিশেলে নতুন বিপিএল যাত্রা শুরু করেছে।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সিলেট থেকে পর্দা উঠেছে বিপিএলের এবারের আসরের। উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় সিলেট টাইটান্স ও রাজশাহী ওয়ারিয়র্স। এই ম্যাচ ঘিরে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয় দুই দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের বাইরে মাঠে দুজনই ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে।

ম্যাচের আগে রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত বলেন, “হোম ক্রাউডের বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই রোমাঞ্চকর। আমাদের দল এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।” কোনো দলকে এগিয়ে রাখতে চান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুই দলই ভালো। যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।”

সিলেটের অধিনায়ক মিরাজও রাজশাহীকে হালকা করে দেখছেন না। তিনি বলেন, “রাজশাহীর অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজিরই স্বপ্ন চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সিলেট কখনো চ্যাম্পিয়ন হয়নি। যদি প্রথমবার সেটা আমার হাত ধরে হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই বিশেষ কিছু হবে।”

তবে মাঠের প্রস্তুতির পাশাপাশি টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনই আলোচনায় আসে কয়েকটি বিতর্ক। চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয় অনিশ্চয়তা, দায়িত্ব নিতে হয় বিসিবিকে। একই দিনে নোয়াখালী এক্সপ্রেসের অনুশীলন বয়কট করে মাঠ ছাড়েন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও তালহা জুবায়ের। পরে বিকেলে তারা আবার দলে ফেরেন।

ঘটনার ব্যাখ্যায় সুজন বলেন, “হিট অব দ্য মোমেন্টে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। অনুশীলনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী না পাওয়ায় আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। পরে মালিকপক্ষ ও বিসিবির সঙ্গে কথা হয়েছে। এটা পুরোপুরি ভুল বোঝাবুঝি।” তিনি মনে করেন, এই ঘটনা শুরুতেই হয়ে যাওয়ায় দলের বন্ধন আরও শক্ত হবে।

এবারের বিপিএল ঢাকার বাইরে শুরু হওয়াও বড় আলোচনার বিষয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা বাস্তবতা বিবেচনায় রাজধানীর বাইরে সিলেটকে ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর পর আবার সিলেটে বিপিএল ফিরায় স্থানীয় দর্শকদের মধ্যে উৎসাহও চোখে পড়ার মতো।

দর্শক সমাগম মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়া নজর দিয়েছে বিসিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী জানান, “বিপিএল সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, মোট ৬০৫ জন নিরাপত্তা সদস্য মাঠ ও আশপাশে দায়িত্ব পালন করবেন এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

টিকিট বিক্রিতেও দেখা গেছে দর্শকদের ব্যাপক আগ্রহ। বিসিবি পরিচালক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, সিলেট পর্বের প্রথম দুই দিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “এবার শতভাগ অনলাইনে কাগজবিহীন পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।” উদ্বোধনী দিনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

সব প্রস্তুতির মধ্যেই গ্যালারি সাজানো, উইকেট ও আউটফিল্ড প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত ছিলেন মাঠকর্মীরা। বিতর্ক, নিরাপত্তা আর প্রত্যাশার ভার কাঁধে নিয়েই শুরু হয়েছে বিপিএল। মাঠের ক্রিকেট যদি দর্শকদের মন ভরাতে পারে, তাহলে এই আয়োজন নিয়েই নতুন করে আশাবাদী হতে পারেন আয়োজকরা।