শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

৪৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে বিক্রি হলো পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স

প্রতিনিধি: / ৪ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিদেশ : দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা নানা জল্পনা ও প্রচেষ্টার পর অবশেষে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) মালিকানা হস্তান্তর করল পাকিস্তান সরকার। মঙ্গলবার সরাসরি সমপ্রচারিত একটি প্রতিযোগিতামূলক নিলামের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় এই বিমান সংস্থার ৭৫ শতাংশ শেয়ার ৪৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে কিনে নিয়েছে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ ও গবেষণা সংস্থা আরিফ হাবিব লিমিটেড। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য এই বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়াকে একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ গত বছর প্রথম প্রচেষ্টায় উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় এই প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছিল। এবারের নিলামে করাচিভিত্তিক আরিফ হাবিব লিমিটেড স্থানীয় অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান লাকি সিমেন্ট ও এয়ারব্লুকে পেছনে ফেলে এই গৌরব অর্জন করে। এই বড় ধরনের চুক্তির ফলে বিজয়ী প্রতিষ্ঠান এখন পিআইএর ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হিসেবে গণ্য হবে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার সুযোগও পাবে। করাচিভিত্তিক ব্রোকারেজ হাউস টপলাইন সিকিউরিটিজ জানিয়েছে, বিক্রয়লব্ধ অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ এয়ারলাইন্সের আধুনিকায়ন ও বহর উন্নয়নের কাজে পুনরায় বিনিয়োগ করা হবে। বাকি অংশ ব্যয় করা হবে প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত ঋণ পরিশোধে। বর্তমান এই চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন হতে এখন কেবল সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে। পাকিস্তানের এই ঐতিহাসিক বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অন্যতম কঠিন শর্ত ছিল। আইএমএফের শর্ত মেনে পাকিস্তান সরকার গত কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম এবং করের হার বৃদ্ধি করায় জনমনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে অলাভজনক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকারি মালিকানা প্রত্যাহারের অঙ্গীকার পূরণে পিআইএ বিক্রি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পিআইএ প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি রুপি লোকসান গুনে আসছিল, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর বিশাল এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার আগে থেকেই এয়ারলাইন্সের ৮০০ কোটি রুপির বেশি ঋণের মধ্যে ৬৭০ কোটি রুপি একটি পৃথক হোল্ডিং কোম্পানিতে স্থানান্তর করেছে, যা সরকার নিজে পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছে। এই ঋণের বোঝা সরিয়ে নেওয়ায় ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে পিআইএ প্রায় ১ হাজার ১৫০ কোটি রুপি কর-পূর্ব মুনাফা দেখাতে সক্ষম হয়। এর পাশাপাশি সমপ্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে লাভজনক রুটগুলোতে পুনরায় ফ্লাইট চালুর অনুমতি পাওয়ায় এয়ারলাইন্সটির বাজারমূল্য ও গুরুত্ব আগের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নিলামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জাইদি এই সফলতাকে বেসরকারি খাতে নতুন শক্তি সঞ্চারের মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, আরিফ হাবিব লিমিটেডের জন্য সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে পুরোনো হয়ে যাওয়া বিমানবহরের আধুনিকায়ন এবং অতিরিক্ত জনবল ও পরিচালনা ব্যয় পুনর্গঠন করা হবে তাদের প্রধান কাজ। পাকিস্তানের আকাশসীমায় পিআইএকে আবারও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতামূলক একটি বিমান সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলাই হবে নতুন মালিকপক্ষের মূল লক্ষ্য। সূত্র: দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস


এই বিভাগের আরো খবর