রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি করবে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত

প্রতিনিধি: / ৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিদেশ : আগামী জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সংশ্লিষ্ট একটি ঐতিহাসিক মামলায় জনসাধারণের শুনানি করবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতটি জানিয়েছে, এই মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, এই কার্যক্রমটি একটি নজির স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা গাজায় যুদ্ধের বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলাকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ, এটি হবে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে আইসিজের ‘যোগ্যতার ভিত্তিতে’ প্রথম গণহত্যার মামলার শুনানি। শুনানির প্রথম সপ্তাহে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশ গাম্বিয়া- যারা মামলাটি আইসিজেতে নিয়ে এসেছিল, তারা ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবে। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সহায়তায় গাম্বিয়া ২০১৯ সালে আইসিজেতে মামলাটি দায়ের করে। এতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ মুসলিম রোহিঙ্গা জাতিগত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়। ২০১৯ সালে দায়ের করা মামলাটিতে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের নৃশংস অভিযানের সময় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করা মিয়ানমার ১৬ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালতে তাদের যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবে। আইসিজে সাক্ষীদের শুনানির জন্য তিন দিন বরাদ্দ করেছে। এই শুনানি জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে। দেশটিতে দীর্ঘদিনের রক্তপাতের ফলে ৭ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা হত্যা, ধর্ষণ এবং পুরো গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার খবর জানিয়েছেন। ফলস্বরূপ, দেশগুলোর মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তিকারী আইসিজে ২০২০ সালে মিয়ানমারকে গণহত্যা রোধে ‘তার ক্ষমতার মধ্যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণের’ নির্দেশ দেয়। এই বছরের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) এক বিশেষ উচ্চ-পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী দাউদা জালো বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই জানুয়ারির গণশুনানির ফলাফল, অর্থাৎ আদালতের রায় দেখার আশা করছেন। জ্যালো বলেন, ‘আমরা প্রায় ছয় বছর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আমাদের মামলা দায়ের করেছিলাম। এখন, আমরা এই মামলার যোগ্যতার ওপর মৌখিক শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, যা আদালত ২০২৬ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় নির্ধারণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমার কেন দায়ী, সে বিষয়ে গাম্বিয়া তার যুক্তি উপস্থাপন করবে এবং গণহত্যার শিকারদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’ উইমেন’স পিস নেটওয়ার্ক-মিয়ানমারের নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু সেপ্টেম্বরে আল জাজিরাকে বলেছিলেন, আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলার সমর্থনে হস্তক্ষেপকারী দেশগুলোর সংখ্যা ‘খুব শক্তিশালী। তারা একত্রিত হয়ে রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা বন্ধে কিছু করতে পারে।’ প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বাস করত যা দেশটির ৫ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ ছিল। রাষ্ট্রীয় মদদে জাতিগত নির্মূল অভিযান তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র সমপ্রদায় সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এখন দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কঙ্বাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। ঢাকা অন্যান্য দেশগুলোকে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার বোঝা বহন করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে চাপ দিচ্ছে। অনেক শরণার্থী বছরের পর বছর ধরে শিবিরে দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করছেন। আবার অন্যরা অন্যান্য দেশে পৌঁছানোর জন্য নৌকায় বিপজ্জনক পথে যাত্রা করেন এবং অনেকেই প্রাণ হারান।


এই বিভাগের আরো খবর