বিদেশ : রুশ আগ্রাসনের মধ্যেও অস্ত্রশিল্প দ্রুত সক্ষমতা বাড়াচ্ছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, ফ্রন্টলাইনে ব্যবহৃত অস্ত্রের অর্ধেকের বেশি এবং দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্রের প্রায় পুরো সরবরাহই এখন নিজেদের তৈরি। যুদ্ধের শুরুতে সোভিয়েত যুগের পুরোনো সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল ইউক্রেন এখন ড্রোন ও রোবোটিক অস্ত্রে বিশ্বে অগ্রগামী। দেশের ভেতরেই এখন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে কিয়েভ। ইউক্রেনের অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার পয়েন্টের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ইরিনা তেরেখ জানান, ফ্লেমিংগো নামে তারা একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যা এখন কালো রঙ করা—কারণ “এটি রুশ তেলক্ষেত্রের ওপর আঘাত হানে।” বড় জেট ইঞ্জিন বসানো এই অস্ত্রটির আকৃতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মান ভি-১ রকেটের মতো। কোম্পানি জানায়, মিসাইলটি ইতোমধ্যে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে টার্গেট প্রকাশ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের দুটি কারখানা ইতোমধ্যে রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই লুকিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা ইউক্রেনের বাঁচার কৌশল। বিবিসির প্রতিনিধিদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় চোখ বেঁধে। কারখানার ভেতরের স্তম্ভ, জানালা বা ছাদের মতো কোনও কাঠামো বা কর্মীদের চেহারার ছবি তুলতে নিষেধ করা হয়। ফ্লেমিংগোর পাল্লা প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার বলে জানা গেছে—যা মার্কিন টমাহকের কাছাকাছি। ফ্রন্টলাইনের দুর্বলতা ঠেকাতে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অর্থনীতি ধসাতে আঘাত করতে চায়। ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রধান ওলেঙ্ান্ডর সিরস্কি দাবি করেন, এসব আঘাতে রুশ অর্থনীতির অন্তত ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে। ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, লক্ষ্য একটাই—রাশিয়ার সামরিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলা। তাদের দাবি, রাশিয়ার গভীরে রিফাইনারি, অস্ত্র কারখানা ও গোলাবারুদের গুদামে শত শত হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া প্রতিদিন প্রায় ২০০ শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের সক্ষমতা তার অর্ধেকের মতো। এসব হামলা শুধু সামরিক স্থাপনা নয়—বেসামরিক অবকাঠামোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ফলে ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। ফায়ার পয়েন্টের তেরেখ বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার মতো সম্পদ জোগাড় করতে না পারলেও “কৌশল ও মেধা” দিয়ে টেক্কা দিচ্ছে। তাদের ড্রোন স্টার্টআপ এখন দৈনিক ২০০ ড্রোন তৈরি করে, যার দাম রুশ শাহেদ ড্রোনের এক-তৃতীয়াংশ। কোম্পানি বলছে, তাদের ড্রোনই ইউক্রেনের দীর্ঘ-পাল্লার হামলার ৬০ শতাংশ সম্পন্ন করে। তবে ইউক্রেন এখনও গোয়েন্দা তথ্য, টার্গেটিং ও অর্থের জন্য মিত্রদের সহায়তা চায়। তবুও মার্কিন ও চীনা সরঞ্জাম এড়িয়ে তারা নিজেরাই কম্পোনেন্ট জোগাড়ে মনোযোগী। তেরেখের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চয়তা তাদের নিজস্ব অস্ত্র ব্যবহারে বাধা তৈরি করতে পারে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা স্থগিত হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে প্রস্তাবনাগুলোকে তেরেখ “আত্মসমর্পণ আলোচনা” বলে মনে করেন। তার মতে, ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্র-শিল্পই একমাত্র কার্যকর নিরাপত্তা। তিনি মনে করেন, ইউরোপের সামনে ইউক্রেন একটি স্পষ্ট উদাহরণ রেখে দিচ্ছে। কারণ, যে কোনও দেশ এই হামলার মুখোমুখি হলে বহু আগেই পরাজিত হতো। সূত্র: বিবিসি