মোরেলগঞ্জ প্রতিবেদক : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে তিনদিন ব্যাপি ৩০১ তম ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ
আউলিয়ার মেলা জমে উঠেছে আজ বৃহস্পতিবার ভর মেলার শেষ দিন। করোনাকালিন সময় থেকে ৪ বছর এ
মেলা বন্ধ ছিল। এ বছর মেলার অনুমতি পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে এসেছে এ মতাদর্শনের
আশিকি ভান্ডারি ভক্তবৃন্দ রাতভর জিকির, মাজভান্ডারি গান ওরজ মাহফিল গোটা মাঝার প্রাঙ্গনে মুখরিত
হয়ে উঠেছে।
কালাচাঁদ মাজারে ওরজকে কেন্দ্র করে মেলার তিন দিন আগে থেকেই এখানে প্রচুর লোক সমাগম হতে
থাকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। অন্যসব বছরের চেয়ে এ বছর লোকসমাগন দ্বিগুন হয়ে বলে মাঝারের প্রধান
খাদেম শহিদ কাজী জানিয়েছেন। শত শত দোকানীরা মেলা প্রাঙ্গন ও তার আশপাশে এলাকায় শিশুদের খেলনা,
নাগর দোলা, টমটমসহ নানা সামগ্রী নিয়ে পশরা সাজিয়ে বসেছে। দক্ষিণাঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন
এলাকা থেকে হাজার হাজার ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ ও দর্শনার্থীরা এ মেলা দেখতে ভীড় জমিয়েছে। দোকানি,
দর্র্শনার্থী ও ভক্তবৃন্দের উপচে পড়া লোক সমাগম ঘটেছে কালাচাঁদের মেলায়।
২১০ বছর পূর্বে শিশু কালাচাঁদ আউলিয়া পানগুছি নদীতে ভেসে এসেছিল ফকিরের তকিয়া বারইখালী
কাজী বাড়ি এলাকায় আস্থানা গেড়েছিল। লোকমুখে রয়েছে তার বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক কাহিনী।
ঐতিয্যবাহি মেলার স্থায়ী বাসিন্দা ওরজ ও মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজী জাকির হোসেন বাচ্চু
বলেন, পিতা ও দাদার মুখে শুনেছি ভেসে আশা শীতার্ত কালাচাঁদকে দেখে এক লোক তার গাঁয়ের চাদর
দিয়ে দেয়। কালাচাঁদ চাদরটি পেয়ে তার সামনে জলন্ত আগুনে ভিতরে ফেলে দিলে তা পুড়ে যায়। এতে ঐ
লোকটি আফসোস করলে কালাচাঁদ জ্বলন্ত আগুন থেকে অক্ষত চাদরটি উঠিয়ে তাকে ফেরত দেয়।
সমসাময়িক সময়ে কালাচাঁদ আউলিয়া নাকি বাঘের পিঠে ঘুরে বেড়াতেন। বারইখালীর কাজী বাড়ির
চত্বরে তিনি আস্তানা গড়েন। আর এখানেই তিনি জ্যান্ত কবর নিয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মেলায়
রাতভর চলে ওয়াজ মাহফিল, ওরশ, মুর্শিদী ও মাইজ ভান্ডারী গান। ভক্তবৃন্দরা কালাচাঁদ আউলিয়ার মাজারে
আগরবাতি আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। হাজারো ভক্তরা মনের আশা পূরন আর মানতের টাকা
পয়সা মাজারে দান করে তৃপ্ত পায়।
পানগুছি থিয়েটারের নির্বাহী পরিচালক জহির বাচ্চু বলেন, বাঙালির ইতিহাস ঐতিয্যের মধ্যে এ অঞ্চলের
কালাচাঁদ মাঝারেও ওরজ তথা মেলা দীর্ঘবছরের পুরাতন। এ ঐতিয্যকে ধরে রাখতে অনুমতির ক্ষেত্রে কোন
প্রকার প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন বলে
তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ বাউল সমিতির সভাপতি পৌর শ্রমীক দলের সভাপতি মাসুদ খান চুন্নু বলেন, ৪০ বছর ধরে
ঐতিয্যবাহী কালাচাঁদ এ মেলার মাঠে বাউল ও আশিকিভক্তদের মিলন মেলা ঘটে। স্থায়ীভাবে বাউলদের জন্য
মাঠের জন্য দাবি করেন প্রশাসনের প্রতি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদাধিকার বলে মেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিনে পুরানো ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উৎযাপনের
জন্য ইতোমধ্যে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে আগত ভক্তবৃন্দ দর্শনার্থীদের
নিরাপত্তার জন্য আইন শৃংঙ্খলা রক্ষায় সার্বক্ষনিক রয়েছেন টিমওয়ারি ভলানটিয়ার আনসার সদস্য পুলিশ
প্রশাসন।