বিদেশ : তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাপানের পর্যটন খাত। জাপান ভ্রমণ এড়াতে চীন তার নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়ার পর গতকাল সোমবার জাপানের পর্যটন ও খুচরা খাত সংশ্লিষ্ট শেয়ারের দাম কমে যায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। চীনের সামরিক কর্মকাণ্ডের সমালোচক হিসেবে পরিচিত জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি চলতি মাসে সতর্ক করেন বলেন, চীনা বাহিনী তাইওয়ানে হামলা চালালে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে জাপান। ৭ নভেম্বর জাপানি পার্লামেন্টের ওই অধিবেশনে তাকাইচি বলেন, (তাইওয়ানে) যদি যুদ্ধজাহাজ ও শক্তি প্রয়োগের আলামত দেখা যায়, তা যে কোনও দৃষ্টিকোণ থেকে ‘টিকে থাকার হুমকি পরিস্থিতি’ (সারভাইভাল থ্রেটেনিং সিচুয়েশন) তৈরি করতে পারে। ‘সারভাইভালুথ্রেটেনিং সিচুয়েশন’ হলো জাপানের ২০১৫ সালের নিরাপত্তা আইনের একটি আইনি পরিভাষা, যেখানে মিত্রদেশের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ টোকিওর জন্য অস্তিত্বগত হুমকি বলে বিবেচিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীকে পদক্ষেপ নিতে পারে। এই কথার প্রতিক্রিয়া রবিবার চীন তার নাগরিকদের জাপানে পড়াশোনা বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলে এবং চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাপানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দেয়। জাপান সরকারের এক জরিপ অনুযায়ী, গত বছর জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি চীনা শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি, জাপানে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে চীন দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে। চীনের ওই পরামর্শের পর, জাপানের ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর শেয়ারে বড় ধস নামে। মিৎসুকোশি ও ইসেতান চেইনের মূল কোম্পানির শেয়ার প্রায় ১২ শতাংশ কমে যায়। কসমেটিকস ব্র্যান্ড শিসেইডোসহ পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারেও বড় পতন ঘটে। তাকাশিমায়া ডিপার্টমেন্ট স্টোর ও ইউনিক্লোর মালিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্লোজিংয়ের আগে ৫ শতাংশের এর বেশি হ্রাস পায়। এছাড়া, জাপান এয়ারলাইন্স ও এএনএ হোল্ডিংসের শেয়ারেও পতন দেখা যায়। টোকিও ডিজনি রিসোর্ট পরিচালনাকারী ওরিয়েন্টাল ল্যান্ডের শেয়ারদিনশেষে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পায়। এ ছাড়া সপ্তাহান্তে চায়না সাউদার্ন, চায়না ইস্টার্ন ও এয়ার চায়নাুসহ বিভিন্ন চীনা এয়ারলাইন্স জাপানগামী ফ্লাইটের টিকিটে ফেরত দেওয়ার সুযোগ ঘোষণা করে। তাইওয়ান জাপানের নিকটতম দ্বীপ থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি দক্ষিণে অবস্থিত। রোববার প্রকাশিত কাইডো নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ করে, তাহলে জাপান নিজস্ব প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করবে কি না—সে বিষয়ে জাপানি জনমত বিভক্ত। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য মঙ্গলবার চীন ও জাপানের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ মনে করে বেইজিং এবং অদূর ভবিষ্যতে কোনও একদিন কথিত একীভূতকরণের জন্য বলপ্রয়োগের ঘটনাও বিবেচনায় রাখে। তবে তাইওয়ানের অনেকে নিজেদের পৃথক জাতি হিসেবে বিবেচনা করেন। আবার বড় একটা অংশ এভাবেই স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পক্ষে, যেখানে তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করে না, আবার চীনের সঙ্গেও একীভূতও হবে না।