সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মাদাগাস্কার। দেশটির সৈনা সদস্যদের কিছু দল আদেশ অমান্য করে রাজধানী আন্তানানারিভোতে জড়ো হওয়া হাজার হাজার জেন-জি বিক্ষোভকারীর সঙ্গে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং সরকার পতনের শঙ্কা আরও জোড়ালো হচ্ছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনিয়া এবং নেপালে জেন-জি তরুণদের বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাদাগাস্কারেও বিক্ষোভ শুরু হয়। এদিকে শনিবার তরুণ বিক্ষোভকারীরা প্রথমবারের মতো রাজধানীতে প্রবেশ করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য স্টান গ্রেনেড এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করার পর, সৈন্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে উল্লাসের সঙ্গে তাদের স্বাগত জানানো হয়। এর আগে শহরের উপকণ্ঠে একটি সেনা ব্যারাকে এক সভায়, ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী অভিজাত ক্যাপস্যাট ইউনিটের সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। সোয়ানিয়েরানা জেলার ঘাঁটির সৈন্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেন, আসুন আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিভিন্ন বাহিনীতে থাকা সদস্যরা আমাদের বন্ধু, ভাই এবং বোনদের অর্থের বিনিময়ে গুলি করা থেকে বিরত থাকি। তারা বিমানবন্দরে সৈন্যদের সব বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করার আহ্বান জানায়। এছাড়া অন্যান্য ক্যাম্পে থাকা সৈন্যদের ‘তোমাদের বন্ধুদের গুলি করার আদেশ প্রত্যাখ্যান করো’ এমন আহ্বানও জানানো হয়। তারা বলছিল, গেট বন্ধ করো এবং আমাদের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করো। তোমাদের ঊর্ধ্বতনদের আদেশ মান্য করো না। যারা তোমাদের সহকর্মীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেয় তাদের দিকেই তোমাদের অস্ত্র তাক করো কারণ আমরা মারা গেলে তারা আমাদের পরিবারের কোনো খোঁজ নেবে না। গত শনিবারের এই বিক্ষোভ কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই মূলত সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। তবে গত শনিবার মোট কতজন সেনা সদস্য বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। এদিকে সশস্ত্র বাহিনীর নবনিযুক্ত মন্ত্রী সৈন্যদের ‘শান্ত থাকার’ আহ্বান জানিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জেনারেল ডেরামাসিনজাকা মানান্তসোয়া রাকোতোয়ারিভেলো বলেন, আমরা আমাদের ভাইদের যারা আমাদের সঙ্গে একমত নন, তাদের সংলাপকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। মাদাগাস্কার সরকারকে অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে এবং অবাধ সংগঠন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, মাদাগাস্কারে চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন।