বিদেশ : আফগানিস্তানের সঙ্গে সামগ্রিক কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে ভারত। তারই অংশ হিসেবে কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশনকে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসে রূপান্তর করা হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এ ঘোষণা দেন। সে সময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। জয়শঙ্কর বলেন, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে ভারত। আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, কাবুলে আমাদের টেকনিক্যাল মিশন এখন দূতাবাসের মর্যাদা পাচ্ছে। তিনি আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভারতের ‘গভীর আগ্রহ’-এর কথা উল্লেখ করে জানান, দেশটিতে ইতোমধ্যে চলমান ভারত-সমর্থিত একাধিক প্রকল্পের পাশাপাশি আরও ছয়টি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। আফগান জনগণের স্বাস্থ্যখাতে ভারতের দীর্ঘদিনের সহায়তার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন জয়শঙ্কর। কোভিড-১৯ মহামারির সময়কার সহায়তার প্রসঙ্গ তুলে তিনি ২০টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার হিসেবে দেওয়ার ঘোষণা দেন, পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম, টিকা ও ক্যানসার ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন। চার বছর আগে তালেবান ও তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের সময় কাবুলে অবস্থিত ভারতীয় মিশনের মর্যাদা অবনমন করে দিল্লি। একই সঙ্গে বিভিন্ন শহরের কনস্যুলেটগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সহিংসতার সময় ভারত সামরিক বিমানে নিজের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়। ওই বছর আগস্টের ১৫ ও ১৬ তারিখে দুটি সি-১৭ পরিবহন বিমান কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনে। তার দশ মাস পর কাবুলে সীমিত আকারে কূটনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে দিল্লি। তখন তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলে ভারত একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠায়। ২০২৫ সালের অক্টোবর নাগাদ দুই দেশের সম্পর্ক যে আরও উন্নত হয়েছে, মুত্তাকির বক্তব্যে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। তিনি বলেন, তালেবান কখনও আফগান ভূমিকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে দেবে না। পাকিস্তানের সামপ্রতিক আফগানিস্তান অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্যটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামাবাদ দাবি করছে, আফগান মদদে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ার করে বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের প্রশংসা করে মুত্তাকি বলেন, আমি দিল্লিতে এসে আনন্দিত। এই সফর দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি করবে। ভারত ও আফগানিস্তানকে আরও বেশি যোগাযোগ ও বিনিময় বাড়াতে হবে। আমরা কোনো দল বা গোষ্ঠীকে আমাদের ভূমি অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেব না। তিনি আগস্টের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ভারতের দ্রুত সহায়তার কথাও স্মরণ করেন, যেখানে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও পাঁচ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছিল। তিনি বলেন, সেই সময় ভারত ছিল প্রথম সহায়তা পাঠানো দেশ ছিল। আফগানিস্তান ভারতকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করে এবং পারস্পরিক সম্মান, বাণিজ্য ও জনগণের সম্পর্কের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চায়। আমরা সম্পর্ক আরও মজবুত করতে একটি পরামর্শমূলক কাঠামো তৈরির জন্য প্রস্তুত। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানের সঙ্গে এটি ছিল প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। দিল্লি সফরের জন্য মুত্তাকির ওপর জাতিসংঘের আরোপিত ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।