বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৬ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

সুন্দরবনের উপকূলে সবুজ বিপ্লবঃ লবণাক্ত জমিতে করলা ও মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি

প্রতিনিধি: / ১০৯ দেখেছেন:
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

মো. নাজমুল, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)প্রতিনিধিঃ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলীয় জনপদ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে জেগে উঠেছে সবুজ বিপ্লবের নতুন গল্প। একসময় যেখানে শুধু মাছের ঘেরই ছিল উপার্জনের ভরসা, আজ সেখানে ফুটছে সবুজ করলা আর সোনালী মিস্টি কুমড়ার আশার ফসল। বাম্পার ফলন আর ভালো দামে বিক্রিতে কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
উপজেলার উমাজুরি গ্রামের কৃষক শাহজালাল বাবু বলেন, “অন্য ফসলের চেয়ে করলা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। জৈব সার ব্যবহার করায় ফলনও অনেক ভালো হচ্ছে।” তিনি ১০ বিঘা জমিতে করলা চাষ করে এখন হাসিমুখে বাজার ধরছেন। বর্তমানে খেতেই করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ট্রাকযোগে এসব করলা যাচ্ছে ঢাকার কাওরান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।
ভাষানদল গ্রামের আব্দুল জলিল তালুকদার একসময় ছিলেন ডেকরেটর ব্যবসায়ী, এখন সফল কৃষক। নিজের মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া, করলা, চাল কুমড়া ও শসা চাষ করে তিনি এখন কোটিপতি। তার ঘেরজুড়ে মাচায় ঝুলছে বড় বড় কুমড়া—যার ওজন ১ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, আর একটি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ মৌসুমে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় কয়েক হাজার টন কুমড়া উৎপাদিত হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য দুই থেকে তিন কোটি টাকা।
তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আশপাশের ৩০ গ্রামের কৃষকরাও এখন ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষে ঝুঁকেছেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষ এখন উপকূলীয় কৃষির বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আমরা কৃষকদের বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিচ্ছি। শুধু মিষ্টি কুমড়া চাষেই ২০৫ হেক্টর জমিতে ২০০ জনের বেশি কৃষক অংশ নিয়েছেন।” তিনি আরও জানান, “নতুন প্রযুক্তি ও জৈব সার ব্যবহারে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ।”
এখন মোরেলগঞ্জে গড়ে উঠেছে নতুন সবজির বাজার। প্রতিদিন ভোরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা দরদাম করে ট্রাকভর্তি সবজি নিয়ে যাচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তে। স্থানীয়দের আশা, সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই মোরেলগঞ্জ হবে দেশের নতুন “সবজি হাব”।
মোরেলগঞ্জের  মানবঅধিকার কর্মী ও সমাজ কর্মী মোঃ নাজমুল  বলেন, “কৃষকদের সহজ শর্তে কৃষিঋণ ও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে এ অঞ্চলের প্রতিটি ঘেরই হয়ে উঠবে সবুজ ফসলের ভাণ্ডার।”
📊 তথ্যচিত্রে সবুজ বিপ্লব
সূচক তথ্য বলছে,
উপজেলা মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট
প্রধান ফসল করলা, মিষ্টি কুমড়া, শসা, চাল কুমড়া
মোট চাষি প্রায় ২০০ জন
চাষের এলাকা ২০৫ হেক্টর
মৌসুমি আয় প্রায় ২–৩ কোটি টাকা
করলার দাম ৪০–৪৫ টাকা প্রতি কেজি
কুমড়ার দাম ২৫–৩০ টাকা প্রতি কেজি
একসময় লবণাক্ত জমি আর অনাবাদি ভূমি ছিল উপকূলের কৃষকদের দুঃস্বপ্ন। আজ সেই জমিতেই ফলছে সবুজ করলা আর সোনালী কুমড়া। মোরেলগঞ্জের এই কৃষিবিপ্লব প্রমাণ করছে—সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিশ্রম আর উদ্যম থাকলে উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিও হতে পারে দেশের কৃষির নতুন মানচিত্র।


এই বিভাগের আরো খবর