আনন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে এক গির্জায় ভয়াবহ গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। গত রোববার সকালে গ্র্যান্ড ব্ল্যাঙ্কে অবস্থিত দ্য চার্চ অব জিসাস ক্রাইস্ট অব ল্যাটার-ডে সেইন্টসে সংঘটিত এই হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুকধারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে ৪০ বছর বয়সী থমাস জ্যাকব স্যানফোর্ড। সিএনএনের খবরে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন স্যানফোর্ড। তিনি ইরাক যুদ্ধের সাবেক সেনা ও পেশায় ট্রাকচালক ছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, গত রোববার সকালে স্যানফোর্ড প্রথমে তার পিকআপ ট্রাকটি গির্জার মূল প্রবেশদ্বারে ধাক্কা মারে। এরপর একটি অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে চার্চে উপস্থিত উপাসকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং এক পর্যায়ে ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে প্রতিরোধ করে।মার্কিন মেরিন কর্পসের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মেরিন বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন স্যানফোর্ড। তিনি সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন এবং এই সময়ে একাধিক পদকও পান। ২০০৭ সালের গ্রীষ্মে‘অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম’-এর অংশ হিসেবে ইরাকে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি জাপানেও কর্মরত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্যানফোর্ড বিবাহিত ছিলেন এবং তার এক পুত্রসন্তান রয়েছে। নবজাতক সন্তান জন্মের পর থেকেই বিরল জেনেটিক রোগ ‘কনজেনিটাল হাইপারইনসুলিনিজম’-এ আক্রান্ত হয়। এ অবস্থার জন্য দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় শিশুটিকে এবং অগ্ন্যাশয়ের অংশবিশেষ অপসারণে করাতে হয় একাধিক অস্ত্রোপচারও। এই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পরিবারকে আর্থিক সংকটে পড়ে এবং স্থানীয় একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্তানের পাশে থাকার জন্য স্যানফোর্ড কোকা-কোলায় ট্রাকচালকের চাকরি থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সুস্থ সন্তান পাওয়া যে কত বড় আশীর্বাদ, তা কখনো অবহেলা করবেন না। আমি চার বছর মেরিন কোরে ছিলাম, ইরাকে যুদ্ধ করেছি, কিন্তু সন্তানের অসুস্থতা সামলানো তার চেয়েও অনন্য এক অভিজ্ঞতা।’স্যানফোর্ডের মায়ের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, তিনি একজন শিকারপ্রেমী ছিলেন এবং হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী শিকার করে ছবি তুলতেন। এতসব তথ্য সামনে আসলেও মিশিগান চার্চে এই হামলার পেছনের উদ্দেশ্য এখনো অজানা। তবে তার সামরিক অতীত, পারিবারিক সংগ্রাম ও ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে, যা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন।