মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৪ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগ

প্রতিনিধি: / ৫৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ২৫ জন অতিরিক্ত বিচারপতি মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) শপথ গ্রহণ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারকার নিয়োগ ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য, যা বিচার বিভাগের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং মামলার জট কমাতে সহায়ক হবে।

আইন বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করছেন, অতীতে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিচারক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এবার পেশাদারিত্ব ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন বলেন, “নিয়মিত প্র্যাকটিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, এই নিয়োগের ফলে মামলা জট কমবে এবং বিচার বিভাগ ইতিবাচক ফল ভোগ করবে।”

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলও নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার সহপাঠীসহ বহু অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ পেয়েছেন। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে এ নিয়োগ দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মাদ শিশির ফেসবুকে লিখেছেন, “নবনিযুক্ত মাননীয় বিচারপতিদের অভিনন্দন। আশা করি, ন্যায়ের দণ্ড শক্তভাবে উচ্চকিত করবেন।”

নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, গত ২১ জানুয়ারি ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতিকে চেয়ারপারসন করে সাত সদস্যের একটি কাউন্সিল গঠিত হয়। এরপর ২৮ মে আবেদন আহ্বান করা হয়। মোট ৫৯ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি গত সোমবার (২৫ আগস্ট) সেই তালিকা অনুমোদন দিলে আইন মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে এবং পরদিন মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি নবনিযুক্তদের শপথবাক্য পাঠ করান।

তবে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরে আপত্তিও তুলেছেন কয়েকজন আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. পারভেজ হোসেন অভিযোগ করেছেন, “দেশের প্রায় ৩০০ জন আইনজীবী সিভি জমা দিলেও কেবল ৫৩ জনকে ডাকা হয়েছে। অনেক যোগ্য প্রার্থীকে উপেক্ষা করা হয়েছে।” তিনি জানান, গাইডলাইনবিহীন এ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে তারা আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ জনে। তবু এখনো প্রায় ৬ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ হাজারের কাছাকাছি। ফলে নতুন বিচারকদের নিয়োগ বিচারব্যবস্থার গতি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিচার বিভাগ সংস্কারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এই নিয়োগকে তারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয়, প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য বিচারক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন এবং বাণিজ্যিক আদালত সম্প্রসারণ। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা আরও শক্তিশালী হবে।


এই বিভাগের আরো খবর