সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৯ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

আকস্মিক বন্যায় বিয়ের দুই দিন আগে প্রাণ গেল পরিবারের ২৪ সদস্যের

প্রতিনিধি: / ১৩৪ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

বিদেশ : বিয়ের দুই দিন আগে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে নূর মুহাম্মদ তার মায়ের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ কথোপকথন করেছিলেন। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই আকস্মিক বন্যা তার পরিবারের ২৪ জন সদস্যের প্রাণ কেড়ে নেয়। পাকিস্তানে সামপ্রতিক বন্যায় পরিবার হারানো নূর মুহাম্মদ কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো জানাচ্ছিলেন। গত ১৫ আগস্ট থেকে দেশটির উত্তর-পশ্চিমে ভয়াবহ বন্যায় নিখোঁজ প্রায় ৪০০ জনের মধ্যে ২০০ জনেরও বেশি মারা গেছে। বুনের জেলার কাদির নগর গ্রামে মুহাম্মদের বাড়ি। সামপ্রতিক প্রবল বন্যায় এই গ্রামটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের একটি জলধারার তীরে অবস্থিত পরিবারের ৩৬ কক্ষের বিশাল বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমি বোঝাতে পারব না যে, মা কতটা খুশি ছিল।’ ২৫ বছর বয়সী মুহাম্মদ কাঁদতে কাঁদতে তার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে অনেকের সঙ্গে শোক প্রকাশ ও প্রার্থনা করতে বসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।’ রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, মুহাম্মদ জানান, তিনি বাড়ি ফিরে আসার সময় ধ্বংসস্তূপ এবং ভারী পাথর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। পাহাড় থেকে কাদা এবং প্রচণ্ড বন্যার পানির সঙ্গে ঘরবাড়ি, বাজার এবং ভবনগুলো ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘বন্যা এলো, একটা বিরাট বন্যা এলো… সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেল – আমার মা, বোন, ভাই, চাচা, দাদা এবং শিশুদের।’ মুহাম্মদ মালয়েশিয়ায় একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ১৫ আগস্ট তিনি বাড়ি ফেরার জন্য ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে পৌঁছান। বাড়িতে দুই দিন ধরে তার বিয়ের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছিল। অথচ কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ২৪টি জানাজায় অংশ নিতে হয়। তিনি আরও বলেন, তার বাবা এবং আরেক ভাই বেঁচে গেছেন। তারা বিমানবন্দরে তাকে নিতে গিয়েছিলেন। বাকি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, তার চাচাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা মুহাম্মদের দাদার তৈরি বাড়িতে একসঙ্গে থাকতেন। তালিকায় রয়েছেন তার বিয়েতে যোগদানকারী আত্মীয়-স্বজনরাও। মুহাম্মদ জানান, বাড়ির ২৮ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন বেঁচে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আর কী বলতে পারি? এটা আল্লাহর ইচ্ছা।’ এদিকে, তার পরিবার শেষ হয়ে গেলেও তার বাগদত্তা স্ত্রী বেঁচে গেছেন। তাদের বাড়িও ক্ষতির মুখে পড়েছে, তবে বিধ্বংসী কিছু ঘটেনি।
আকস্মিক বন্যা
এই বছরের বর্ষা এবং উত্তর-পশ্চিমে শুরু হওয়া মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটির অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ব্যাপকভাবে মৃত্যু এবং ধ্বংস ডেকে এনেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মুখে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘস্থায়ী ভারী বৃষ্টিপাত এবং বিরল মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে এর তীব্রতা আরও বাড়বে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অজানা সংখ্যক মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এখনো প্রতিদিন মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জুনের শেষের দিকে শুরু হওয়া মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে দেশজুড়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৭৭৬ জনে পৌঁছেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২৫ হাজারেও বেশি মানুষকে উদ্ধার করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছে।


এই বিভাগের আরো খবর