বিদেশ : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনে আরও ১২৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সেই সঙ্গে গাজা দখলের ঘোষণার পর দখলদার বাহিনী শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্থাপিত একটি ধারণা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। গাজা সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনার পর তিনি ইসরায়েলি মিডিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না, তাদের বেরিয়ে যেতে দেওয়া হবে। যারা ফিলিস্তিনিদের জন্য উদ্বিগ্ন ও ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে চান, তাদের সকলের উচিত তাদের দরজা খুলে দেওয়া এবং আমাদের ছবক দেওয়া বন্ধ করা।’ বেশিরভাগ আরব এবং বিশ্বনেতা গাজার জনসংখ্যায় জানিগত নির্মূলের এই ধারণায় বিস্মিত। কেননা এটি হবে আরেকটি ‘নাকবা’ (বিপর্যয়)। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান এবং ট্যাঙ্কগুলো গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। গত দুই দিনে জেইতুন এবং শেজাইয়া এলাকায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। আল-আহলি হাসপাতাল জানিয়েছে, জেইতুনের একটি বাড়িতে বিমান হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বেও ট্যাংকের গোলাবর্ষণে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। অন্যদিকে গাজার কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েলি গুলিতে দুটি পৃথক ঘটনায় ৯ জন ত্রাণপ্রার্থী নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে তিন শিশুসহ আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে অঞ্চলটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৫ জন, যাদের ১০৬ জনই শিশু। যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে দেড় লাখের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে এছেন। চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ত্রাণ সমপ্রদায় ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে। গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।