সর্বশেষ :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

উল্কাপিণ্ড ৫০ লাখ ডলারে বিক্রি!

প্রতিনিধি: / ১৪৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিউইয়র্কে নিলামে ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে মঙ্গলের সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড। ৫৪ পাউন্ড ওজনের এই পাথর সাহারা মরুভূমি থেকে উদ্ধার হলেও এর উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। দেশটির অভিযোগ, উল্কাপিণ্ডটি অবৈধভাবে পাচার হয়ে থাকতে পারে। সথেবি’স নিলামঘরের তথ্য অনুযায়ী, ‘এনডব্লিউএ ১৬৭৮৮’ নামের উল্কাপিণ্ডটি মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে এক গ্রহাণুর আঘাতে ছিটকে পড়ে প্রায় ১৪ কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছায়। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে উত্তর-পশ্চিম নাইজারের সাহারায় এক উল্কাপিণ্ড শিকারি এটি খুঁজে পান। পরে এটি এক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হয়ে ইতালির এক গ্যালারিতে পৌঁছায়। বিজ্ঞানীরা সেখানে এর গঠন পরীক্ষা করেন। গত মাসে নিউইয়র্কে নিলামে বিক্রি হওয়ার আগে পাথরটি রোমে প্রদর্শনীতে ছিল। এটি মঙ্গলের সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড হলেও ইতিহাসে পাওয়া সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড নয়। নাসার তথ্যমতে, নামিবিয়ায় একসময় ১০০ টনেরও বেশি ওজনের উল্কাপিণ্ড পড়েছিল। বিক্রির পর নাইজার সরকার উল্কাপিণ্ডটির আবিষ্কার ও বিক্রির প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত ঘোষণা করে এবং একে “আন্তর্জাতিক অবৈধ পাচারের মতো”বলে অভিহিত করে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট আব্দুরাহমান তিয়ানি দেশের সব ধরনের মূল্যবান ও অর্ধ-মূল্যবান পাথর এবং উল্কাপিণ্ড রপ্তানি স্থগিতের ঘোষণা দেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নাইজারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাহারায় এক উল্কাপিণ্ড অনুসন্ধানকারী এটি আবিষ্কার করেন। তবে সেই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে গত মাসে যিনি এটি কিনেছেন, তাঁর পরিচয়ও গোপন রাখা হয়েছে। এই উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আসা মঙ্গলের সবচেয়ে বড় খণ্ড হিসেবে স্বীকৃত। এর ওজন ৫৪ দশমিক ৩৮৮ পাউন্ড (প্রায় ২৪ দশমিক ৬৭ কেজি)। এটি ২০২৫ সালের ৮ জুলাই নিউইয়র্কে নিলামের আগে প্রথমবারের মতো সোথেবি’জে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। উল্কাপিণ্ড শিকার সাহারা অঞ্চল দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুকনো জলবায়ুর কারণে এই অঞ্চলে উল্কাপিণ্ড ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। ফলে এখানকার অনুসন্ধানকারীরা প্রায়ই এ ধরনের পাথর খুঁজে বের করে, যা সংগ্রাহক ও বিজ্ঞানীদের কাছে বিক্রি হয়। সবচেয়ে মূল্যবান ও বিরল উল্কাপিণ্ডগুলো আসে মঙ্গল ও চাঁদ থেকে। বৈজ্ঞানিক সাময়িকী হেরিটেজের তথ্যমতে, এই উল্কাপিণ্ড প্রথমে এক আন্তর্জাতিক বিক্রেতার কাছে বিক্রি হয় এবং পরে এটি ইতালির এক প্রাইভেট গ্যালারিতে পৌঁছায়। সেখানে ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এর গঠন ও উৎস সম্পর্কে গবেষণা করেন। এরপর রোমে এটি অল্প সময়ের জন্য প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে এটি গত মাসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নিলামে জনসমক্ষে আসে। এক বিবৃতিতে নাইজার সরকার জানায়, ঘটনাটি ‘আন্তর্জাতিক বেআইনি পাচারের মতো’ এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি নাইজারের প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান চিয়ানি দেশজ সম্পদের সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ‘দামি পাথর, আধা মূল্যবান পাথর ও উল্কাপিণ্ড’-এর রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো, এগুলোর উৎস ও গতিপথ শনাক্ত করা যায়। সোথেবি’জ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উল্কাপিণ্ডটি আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই নাইজার থেকে রপ্তানি ও পরিবহন করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘আমরা যেসব জিনিস বিক্রি করি, সবকিছুতেই প্রাসঙ্গিক নথিপত্র ঠিকঠাক থাকে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিয়ম অনুসরণ করা হয়।’ বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসংক্রান্ত বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আইন থাকলেও উল্কাপিণ্ডের ক্ষেত্রে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবিষয়ক আইনজীবী প্যাটি গার্সটেনব্লিথ বলেন, ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক সম্পদ বিষয়ক কনভেনশন অনুযায়ী, উল্কাপিণ্ডও সাংস্কৃতিক সম্পদ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে নাইজারকে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা এই উল্কাপিণ্ডের মালিক এবং এটি চুরি হয়েছিল। মরক্কোর মতো কিছু দেশ তাদের ভূখণ্ডে পাওয়া উল্কাপিণ্ড ফেরত চায়। তবে সাহারার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ও অনানুষ্ঠানিক বাজারের কারণে এসব আইন বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।


এই বিভাগের আরো খবর