আন্তর্জাতিক: ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে এবার ঘটলো নজিরবিহীন একটি বিমান হামলা-যা দেশটির সামরিক ও বেসামরিক কাঠামোয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে। এ ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘উন্মাদ’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রাশিয়ার এই ভয়াবহ আক্রমণ ঘটে গত শনিবার । ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাতভর দেশটির ওপর নিক্ষিপ্ত হয় রেকর্ড ৩৬৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১২ জন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহত হন আরও অনেকে। ২০২২ সালে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এক রাতে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
হামলার পরদিন গত রোববার নিউ জার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “পুতিনের কী হয়েছে? তিনি অনেক মানুষ হত্যা করছেন।” ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি তাকে অনেক দিন ধরে চিনি। সব সময় তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন তিনি শহরে শহরে রকেট ছুড়ে মানুষ মারছেন, এটা আমি একদমই পছন্দ করছি না।”
সাক্ষাৎকারের কিছু সময় পর ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, “পুতিন পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে গেছেন।” তিনি আরও লেখেন, “আমি সব সময়ই বলে আসছি, তিনি ইউক্রেনের একটা অংশ নয়, পুরো দেশটাই চান। এখন হয়তো প্রমাণ মিলছে আমি ঠিকই বলেছিলাম। কিন্তু যদি তিনি তা করেন, তাহলে সেটি রাশিয়ার পতনের পথ তৈরি করবে।”
বিবিসি এবং সিনহুয়া-র খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।” তবে এখনো পর্যন্ত মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।
এদিকে রুশ হামলা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “ওয়াশিংটনের নীরবতা পুতিনকে উৎসাহিত করছে।” তিনি মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান।
তবে জেলেনস্কির এই বক্তব্য নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তিনি যেভাবে কথা বলছেন, সেটা তাঁর দেশের কোনো উপকারে আসছে না। বরং তাঁর মুখ থেকে যা কিছু বের হয়, তা কেবল সমস্যাই সৃষ্টি করে। আমি এটা পছন্দ করছি না, এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত।”
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ।
এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির একটি আলোচনাও চলছে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার পর উভয় পক্ষ প্রায় ১ হাজার যুদ্ধবন্দি মুক্তি দেয়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুদ্ধ থামানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এবং এর মধ্যেই কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে একটি “সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তির”বিষয়ে আলোচনা চলছে। যদিও ইউরোপীয় মিত্ররা এই আলোচনাকে ‘সময়সীমাহীন বিলম্বের কৌশল’ বলেই মনে করছেন।
https://www.kaabait.com