আন্তার্জতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লির অদূরে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে, যার ফলে বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে।
হিন্ডন বিমানঘাঁটি মূলত ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটি, যেখানে সামরিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। তবে সম্প্রতি সেখান থেকে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ১,৪০০ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন।
এদিকে, দিল্লি বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জিএমআর গ্রুপ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, যদি যাত্রীদের চাহিদা না থাকে, তাহলে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে দুটি বাণিজ্যিক বিমানবন্দর থাকতে পারে না। যেহেতু দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হিন্ডন বিমানঘাঁটির দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারের কম, তাই সেখানে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা আইনবিরুদ্ধ।
ভারতের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি তিনটি টার্মিনালে বিভক্তÑ
টার্মিনাল ১ ও ২: অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য।
টার্মিনাল ৩: আন্তর্জাতিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য।
গত বছর এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন প্রায় সাড়ে সাত কোটি যাত্রী। তবে এতো যাত্রী থাকা সত্ত্বেও, দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রায় ২০ লাখ ডলার। তারা মনে করছে, দিল্লির বিদ্যমান বিমানবন্দর যাত্রী সামলানোর জন্য যথেষ্ট সক্ষম, এবং যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়লে তারা লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাবে।
এই অবস্থায় হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হলে দিল্লি বিমানবন্দরের যাত্রীসংখ্যা কমে যাবে এবং এটি অর্থনৈতিকভাবে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করে হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধের আবেদন জানিয়েছে।
সরকার এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দিল্লি বিমানবন্দরে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ কমাতেই হিন্ডন বিমানঘাঁটিকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যদি কোনো অঞ্চলে যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়ে যায়, তবে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন বিমানবন্দর স্থাপনের সুযোগ থাকে।
তবে দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের বিদ্যমান পরিকাঠামোতে আরও বেশি যাত্রী পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। ফলে নতুন বিমানবন্দর বা বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির কোনো প্রয়োজন নেই।
এই বিরোধ নিয়ে দিল্লির আদালত শিগগিরই শুনানি করবে। আদালতের রায় নির্ধারণ করবে, হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালানো অব্যাহত থাকবে নাকি বন্ধ করা হবে। সরকার ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এই আইনি লড়াইয়ের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে ভারতের বিমান চলাচল নীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।