বিদেশ : সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাউইত সমপ্রদায়ের সদস্যদের লক্ষ্য করে চালানো সামপ্রদায়িক হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে শত শত সিরীয় প্রতিবেশী লেবাননে পালাচ্ছে। রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার প্রাণের ভয়ে সিরীয় পুরুষ, নারী ও শিশুদের সিরিয়ার দক্ষিণপশ্চিম সীমান্ত বরাবর বয়ে যাওয়া একটি নদী পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে লেবাননে চলে যেতে দেখা গেছে। গত রোববার সীমান্ত পার হয়ে লেবাননে চলে যাওয়া এক সিরীয় নারী জানিয়েছেন, তিনি তার গ্রামে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাতজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। আরেক নারী জানিয়েছেন, ভারি গোলাগুলির মধ্যে তিনি তার বাড়িতে তিন দিন আটকা পড়ে ছিলেন। এক পুরুষ জানিয়েছেন, জঙ্গিরা তার গ্রামের সবাইকে হত্যা করার হুমকি দেয়, কারণ তারা সংখ্যালঘু আলাউইত সমপ্রদায়ের সদস্য। সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় আলাউইত অঞ্চলে হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর শরণার্থীদের দেশত্যাগের ধারা অব্যাহত আছে। রয়টার্সের সাংবাদিকরা মঙ্গলবার আধ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি সিরীয়কে নহর এল কবির নদীর হাঁটু সমান পানি পার হয়ে লেবাননে চলে যেতে দেখেছেন। তারা নিজেদের শিশুদেরসহ যে যা পেরেছেন সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। নাদা মোহাম্মদ রোববার সীমান্ত পার হয়ে লেবাননের চলে গেছে। তিনি জানান, সীমান্তের কাছে তার গ্রাম, নাম কার্তো। সেখানেই ছিলেন তিনি, কিন্তু মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টার সময় ফোন কলের শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। আত্মীয়রা তাকে জানান, জঙ্গিরা গ্রামে এসে হাজির হয়েছে তাই তার সবকিছু গোছগাছ করে বাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। “আমরা দেখেছি তারা সাতজন মানুষকে জবাই করেছে,” বলেন তিনি। তার কন্যা স্যালি রজব আব্বাউদ জানান, দাড়িওলা বিদেশিরা সিরীয় উপভাষার বদলে শুদ্ধ আরবিতে কথা বলছিল, তাদের লম্বা লম্বা চুল। লেবাননের ওই সীমান্ত অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনে সিরিয়ার থেকে ৩৫০টিরও বেশি পরিবার লেবাননে প্রবেশ করেছে। তারা এমন এক সহিংসতা থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে যার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলেছে, নারী ও শিশুসহ পুরো পরিবারের পর পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশের শিয়া আলাউইত সমপ্রদায় অধ্যুষিত উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে দেশটির সুন্নি ইসলামপন্থি সরকার জানায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর অবশিষ্ট সদস্যরা সরকারি বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আসাদ আলাউইত সমপ্রদায়ের লোক। সরকারের ওই ঘোষণার পর সিরিয়ার বর্তমান সরকারের অনুগত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিদ্রোহ দমন করতে লাতাকিয়ার আলাউইত অঞ্চলে গিয়ে হাজির হতে শুরু করে। বর্তমান সরকারের অনুগত স্থানীয় মসজিদগুলো থেকে জিহাদের ডাক দিতে থাকে। এরপর থেকে যে সহিংসতা শুরু হয় তাতে ১২০০-রও বেশি বেসামরিক নিহত হন বলে পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই আলাউইত সমপ্রদায়ের সদস্য। গত সোমবার সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এসব বেসামরিক হত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর সঙ্গে যদি তার নিজের মিত্ররাও জড়িত থাকে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এই সামপ্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো জড়িত কি না, তিনি তা নিশ্চিত নন বলে শারা জানিয়েছেন। সিরিয়ার সাবেক বিদ্রোহী বাহিনীগুলো ভেঙে দিয়ে তাদের যোদ্ধাদের দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মীকরণ করেছে বর্তমান সরকার।