বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

সিরিয়ায় গণকবর: আসাদের রাষ্ট্রীয় ‘মৃত্যুর যন্ত্র’ উন্মোচিত

প্রতিনিধি: / ১৬৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিদেশ :সিরিয়ায় গণকবর থেকে পাওয়া প্রমাণ দেশটির সাবেক নেতা বাশার আল-আসাদের শাসনামলের একটি রাষ্ট্রীয় পরিচালিত ‘মৃত্যুর যন্ত্র’কে উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ প্রসিকিউটর স্টিফেন র‌্যাপ। তিনি বলেছেন, ২০১৩ সাল থেকে এ যন্ত্রের মাধ্যমে ১ লাখের বেশি মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দামেস্কের কাছে কুতাইফাহ ও নাজহা শহরে দুটি গণকবর পরিদর্শনের পর র‌্যাপবার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিতভাবেই দেখতে পাচ্ছি, এই যন্ত্রে ১ লাখের বেশি মানুষকে গুম করে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই গণহত্যা নাৎসিদের পর এমন ভয়াবহ রূপ আমরা আর দেখিনি।রুয়ান্ডা ও সিয়েরা লিওনের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করা র‌্যাপসিরিয়ার নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণ এবং সম্ভাব্য বিচার কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। র‌্যাপের মতে, গোপন পুলিশ,যারা মানুষদের তাদের বাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে তুলে নিয়ে যেত, কারারক্ষী ও জিজ্ঞাসাবাদকারীরা যারা তাদের অনাহারে ও নির্যাতনে মেরে ফেলত, ট্রাক চালক ও বুলডোজার চালক যারা মৃতদেহগুলো লুকিয়ে ফেলত—এই হত্যাযন্ত্রে হাজারো লোক কাজ করত। আমরা এখানে একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কথা বলছি, যা পরিণত হয়েছে মৃত্যুর যন্ত্রে। ২০১১ সালে আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হওয়া সংঘাতে কয়েক লাখ সিরীয় নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। আসাদ ও তার বাবা হাফেজ আল-আসাদের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরেই মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন দেশের অভিযোগ, তারা ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, কারাগারে ব্যাপক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিরীয় সংগঠন সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্সের প্রধান মৌআজ মুস্তাফা জানিয়েছেন, কুতাইফাহ শহরের গণকবরে অন্তত ১ লাখ মৃতদেহ সমাহিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাজহার এক কৃষক জানিয়েছেন, সেনা পাহারায় রেফ্রিজারেশন ট্রাকে করে লাশগুলো আনা হতো এবং বুলডোজারের সাহায্যে দীর্ঘ পরিখায় ফেলা হতো। উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই গণকবরগুলোর খনন কাজ চলেছে। কুতাইফাহ শহরে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে দু’বার ট্রাকে করে ৩০০ থেকে ৬০০ লাশ নিয়ে আসা হতো বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এক গণকবর খননকারী। সিরিয়ার এই গণহত্যার প্রথম বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় জার্মান আদালতের শুনানি এবং মার্কিন কংগ্রেসের সাক্ষ্যে। মুস্তাফা জানিয়েছেন, প্রতিবার লাশবাহী ট্রাকগুলো দামেস্কের সামরিক হাসপাতালগুলো থেকে আসত এবং লাশগুলো গর্তে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে মাটি চাপা দেওয়া হতো। ২০১৮ সালে সিরিয়া থেকে পালিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নেওয়া এই সাক্ষী বারবার গণহত্যার সাক্ষ্য দিয়েছেন, তবে তার পরিচয় সংবাদমাধ্যমের কাছে গোপন রাখা হয়েছে। হেগের ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পারসনস জানিয়েছে, সিরিয়ায় প্রায় ৬৬টি গণকবর থাকতে পারে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সংগঠনের প্রধান ক্যাথরিন বোমবার্গার বলেন, পরিবারগুলো এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হারানো স্বজনদের খোঁজ করতে শুরু করেছে। তবে সত্য উদ্ঘাটনে সময় ও প্রচেষ্টা লাগবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলে তারা সিরীয় জনগণের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।


এই বিভাগের আরো খবর