দীর্ঘ শাসনামলে সংঘটিত গুম ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা এগিয়ে গেল আরও এক ধাপ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছে এবং অভিযোগ গঠনের পরবর্তী ধাপে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল আগামী ২১ ডিসেম্বর জিয়াউল আহসানকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তিনটি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে শতাধিক মানুষকে গুম ও হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি ধারাবাহিকভাবে এমন কর্মকাণ্ডে জড়ান, যা পরবর্তী সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বলপূর্বক গুমের অভিযোগে রূপ নেয়।
প্রসিকিউশনের দাখিল করা অভিযোগে তিনটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে সজলসহ কয়েকজনকে হত্যা, বরগুনার পাথরঘাটা ও বলেশ্বর নদী এলাকায় অন্তত ৫০ জনকে হত্যার অভিযোগ এবং তথাকথিত বনদস্যু দমনের নামে সুন্দরবনে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি রয়েছে। এসব ঘটনায় জিয়াউল আহসানের সরাসরি নির্দেশ, অনুমোদন কিংবা উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে বলেন, “জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে শতাধিক মানুষকে গুম করে হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েক শ মানুষের গুম ও হত্যার অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।” তিনি জানান, অভিযোগগুলোর পেছনে বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্য রয়েছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তাকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি গ্রেপ্তার করা হয় এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র বলছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। আগামী শুনানিতে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।