শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৪ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

মোদি-পুতিন বৈঠকে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা

প্রতিনিধি: / ১৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিদেশ : মস্কোর তেল কেনা বন্ধ করতে নয়াদিল্লির ওপর প্রবল মার্কিন চাপের প্রেক্ষাপটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নয়াদিল্লি সফরে গতকাল শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে উষ্ণ অভ্যর্থণা জানিয়েছেন। পরে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তাদের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়ার পর মোদির সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক শুরু হয়। নয়া দিল্লি থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। এই সফরে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি, যৌথ উৎপাদন উদ্যোগ, জ্বালানি ক্রয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সমপ্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এটি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পুতিনের প্রথম ভারত সফর। আলোচনার শুরুতে মোদির পাশে বসে পুতিন বলেন, আজকের দিনটির আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, বিমান ও মহাকাশ গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’ দুই নেতা ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্ববাণিজ্যের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবেন। গত বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে মোদি পুতিনকে উষ্ণ আলিঙ্গনে স্বাগত জানান। এরপর তারা দুজন একই গাড়িতে করে একান্ত নৈশভোজে যোগ দেন। এর আগে সেপ্টেম্বরে চীনে তাদের মধ্যে সাক্ষাত হয়েছিল। মোদি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্ব দীর্ঘকালীন এবং আমাদের জনগণের জন্য অত্যন্ত লাভজনক।’ ভারতের রাশিয়ার তেল ক্রয় চালিয়ে যাওয়াকে দায়ী করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগস্টে ভারতের অধিকাংশ পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ওয়াশিংটন মনে করে, রাশিয়ার এই তেল রাজস্ব ইউক্রেন যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে। শীর্ষ বৈঠকে পুতিন বলেন, তিনি মোদির সঙ্গে ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এই পরিস্থিতির সমাধানে সহায়তার জন্য তিনি মোদিকে ধন্যবাদ জানান । মোদি বলেন, ‘ভারত শান্তির পাশে রয়েছে।’

ভারসাম্যের কূটনীতি
ভারত এখন কূটনৈতিক এক সূক্ষ্ণ ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে। একদিকে রাশিয়ার কৌশলগত তেল আমদানির ওপর নির্ভরতা, অন্যদিকে শুল্কসংক্রান্ত আলোচনার সময় ট্রাম্পকে উত্তেজিত না করার চেষ্টা। রাশিয়ায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ সরণ গতকাল শুক্রবার টাইমস অব ইন্ডিয়াুতে লিখেছেন, ‘ভারসাম্য রক্ষা ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির সহজাত বৈশিষ্ট্য।’ ব্যবসা পরামর্শ সংস্থা দ্য এশিয়া গ্রুপের আশোক মালিক এএফপিকে বলেন, ‘মার্কিন শুল্ক ভারতের ক্ষতি করেছে। এই পরিস্থিতিতে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক—উভয় দিক থেকেই বৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ।’ পুতিন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মূর্মুর আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেওয়ার আগে দুই নেতা ব্যবসায়ী ও শিল্পখাতের প্রতিনিধিদেরও সঙ্গেও আলোচনা করবেন। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত এখন রাশিয়ার বড় তেল ক্রেতা। এই তেল ক্রয়ে ভারতের কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। অপরদিকে যুদ্ধের কারণে ইউরোপে বাজার হারানো মস্কোর জন্য নতুন রফতানি বাজার তৈরি হয়েছে। মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন করলে পুতিন ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, মোদি ‘চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন না।’ রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র আমদানি হ্রাস পেয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য বলা হয়, ২০০৯-১৩ সালের সময়কালে ভারতের মোট অস্ত্র আমদানির ৭৬ শতাংশই ছিল রাশিয়ার। ২০১৯-২৩ মেয়াদে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ৩৬ শতাংশে। আলোচনায় থাকবে আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম—বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান ও পারমাণবিক সাবমেরিনসহ অন্যান্য প্রযুক্তি। পাশাপাশি নয়া দিল্লি রুশ বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার চাইবে। দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, মহামারির আগের সময়ের তুলনায় যা প্রায় ছয় গুণ বেশি। তবে এর মধ্যে ভারতের রফতানি ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

 


এই বিভাগের আরো খবর