গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ত্রিশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রোববার (২৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল জানান, দুটি মামলার শুনানি আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এবং একই দিন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা। সেনা কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন আসামিকে সকাল দশটার দিকে আদালতে আনা হয়। এরপর বেলা সাড়ে এগারোটার পর গুমের অভিযোগে করা দুটি মামলার শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
টিএফআই সেলে গুমের অভিযোগে করা মামলায় ১৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ ঠিক করা হয় ৩ ডিসেম্বর। অপর মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ ডিসেম্বর। এর আগে অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণের আগেই শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে স্টেট ডিফেন্সে লড়ার আবেদন করেন জেড আই খান পান্না। পরে ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন মঞ্জুর করে তাকে নিয়োগ দেয়। একই মামলায় এম হাসান ইমামকেও স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল এই সিদ্ধান্ত দেয়। প্যানেলের অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
দুটি মামলার ত্রিশ আসামির মধ্যে বর্তমানে গ্রেপ্তার আছেন তেরো জন সেনা কর্মকর্তা। এর মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেনসহ উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের আদালতে হাজির করার পর থেকেই পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা সুপ্রিম কোর্ট এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেন।
এই মামলাগুলো করা হয়েছে র্যাবের টিএফআই সেলে নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল বা পরিচিত আয়নাঘরে গুমের অভিযোগের ভিত্তিতে। দুটি মামলাতেই শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। অনেকেই পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনাল।