বিদেশ : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রস্তুত। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে মূল শর্তগুলো থেকে সরে আসবে না রাশিয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। গত মাসে তিনি হঠাৎ করেই বুদাপেস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত শীর্ষ বৈঠক বাতিল করেন। গত শুক্রবার ক্রেমলিন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সেই খবর অস্বীকার করে যে, বৈঠকের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর ল্যাভরভ পুতিনের অনুগ্রহ হারিয়েছেন। কারণ, তার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছিল, ইউক্রেন ইস্যুতে মস্কো তার অবস্থান থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে ল্যাভরভ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং আমি নিয়মিত যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা বুঝি। ইউক্রেন ইস্যু এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা ফোনে কথা বলি এবং প্রয়োজনে মুখোমুখি বৈঠকেও প্রস্তুত। প্রায় চার বছর আগে পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠান। বর্তমানে রাশিয়ার বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে এবং প্রায় ১৯ শতাংশ ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মস্কো এখন এসব এলাকা রাশিয়ার অংশ বলে দাবি করছে, যা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে। ল্যাভরভ বলেন, গত ১৫ আগস্ট আলাস্কার অ্যানকারেজে পুতিন ও ট্রাম্পের বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছিল, তা ২০২৪ সালের জুনে পুতিনের উপস্থাপিত শর্ত এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। পুতিনের মূল শর্তগুলো ছিল, কিয়েভের ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা পরিত্যাগ এবং ডনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়াসহ চার প্রদেশ থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার। বর্তমানে রাশিয়া ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়াসহ প্রায় সমগ্র লুহানস্ক, ৮০ শতাংশ ডনেস্ক, ৭৫ শতাংশ খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া এবং খারকিভ, সুমি, মিকোলাইভ ও দ্নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিছু দখলকৃত অঞ্চলকে সাময়িকভাবে ডি ফ্যাক্টো দখল হিসেবে মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ভূখণ্ড ত্যাগের কোনও ক্ষমতা তার নেই এবং তা করলে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা নতুন রুশ হামলার ঝুঁকিতে পড়বে। ল্যাভরভ বলেন, আমরা এখন অ্যানকারেজে হওয়া চুক্তিগুলো বহাল থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিশ্চিয়তার অপেক্ষায় আছি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কেউ রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা কিংবা ক্রিমিয়া, ডনবাস ও নোভোরোসিয়ার জনগণের ঐতিহাসিক মাতৃভূমিতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। নোভোরোসিয়া শব্দটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের একটি অঞ্চল বোঝাতে রুশরা ব্যবহার করে। যা অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে জার সাম্রাজ্যের অংশ হয়েছিল। এটি সেই রুশপন্থি আন্দোলনেরও নাম, যা ওই অঞ্চলে রুশ প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে। ইউরোপে বর্তমানে রাশিয়ার প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরোর সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে। এসব অর্থ ইউক্রেনের সহায়তায় ব্যবহার করার ইউরোপীয় পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে ল্যাভরভ বলেন, এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কোনও আইনি ভিত্তি নেই এবং এমনটি হলে রাশিয়া প্রতিশোধ নেবে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে মস্কোকে অবহিত করেছে যে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা থাকা নিউ স্টার্ট চুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলো বজায় রাখার বিষয়ে পুতিনের প্রস্তাব ওয়াশিংটন পর্যালোচনা করছে।