বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে বললেন, “১৯৭১ সালকে ভুলে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কারণ ওটাই হচ্ছে আমাদের জন্মের ঠিকানা। এই ভূখণ্ডে সেদিন একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছিল-এটা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। ১৯৭১ আমাদের অস্তিত্ব, পরিচয় ও স্বাতন্ত্র্যের কথা।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “একটা শক্তি আছে, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল। তারা এখন সেই ইতিহাসকে নিচে নামিয়ে দিতে চায়। তারা শুধু ২৪ জুলাইয়ের আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায়। কিন্তু আমরা একদিনের জন্য নয়-দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করতে শেখ হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করছি।”
‘আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। আমাদের সিনিয়র নেতাদের শত শত মামলা, ১ হাজার ৭০০ নেতা-কর্মী গুম, ২ হাজার মানুষ খুন হয়েছে-শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছে। আমরা সেটার বিরুদ্ধেই লড়াই করছি’-উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচনের পক্ষের দল। গণঅভ্যুত্থানের পরপরই বলেছিলাম-তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই। তাহলে সংসদ গঠিত হতো, অপশক্তি মাথা তুলতে পারত না। জনগণকে বিভ্রান্ত করে, বোকা বানিয়ে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে-এটা আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরব।
তিনি আরও বলেন, যে সনদ আমরা পাশ করেছি, তাতে বলা হয়েছিল সব রাজনৈতিক দল যেগুলোতে একমত, সেগুলো সই হবে; আর যেগুলোতে একমত হবে না, সেগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ হিসেবে থাকবে। কিন্তু এখন প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবে সেটার উল্লেখই নেই। তারপরও আমরা দায়িত্বশীল দল হিসেবে প্রেস কনফারেন্স করেছি, কিন্তু রাস্তায় নামিনি, কাউকে ঘেরাও করিনি।
পিআর বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন হবে কি না, তা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। গণভোটের কথায় আমরা রাজি হয়েছি, যদিও প্রয়োজন ছিল না। আমরা বলেছি- নির্বাচনের দিনই গণভোট করা হোক। আলাদাভাবে গণভোট করলে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই নির্বাচনে দুটি ব্যালট থাকুক-একটিতে গণভোট, আরেকটিতে সংসদ নির্বাচন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিছু শক্তি পরিকল্পিতভাবে বিভক্তি আনতে চায়। তারা ১৯৭১ সালকে ভুলিয়ে দিতে চায়, কারণ তারা চায় জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার করতে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা আমাদের হত্যা করছিল, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের সংস্কার শুরু করেন-একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেন। শেখ মুজিবের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের পরে জিয়া আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
ফখরুল বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার পর খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসন থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে রূপান্তর করেন। আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু করেন, যার অধীনে চারটি নির্বাচন সুন্দরভাবে হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটি বাতিল করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন তারা বলছে আগে গণভোট, পরে নির্বাচন। আমরা কখনোই নির্বাচনের পেছানোর কথা বলিনি। আমরা চাই, নির্বাচন দ্রুত হোক। জনগণকে মিথ্যা বলে প্রতারণা করবেন না।