 
						বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো চূড়ান্ত রায় কার্যকর হয়নি। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্ণ হলো—যে ঘটনায় পুরো দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তৎকালীন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরদিন সোমবার (৭ অক্টোবর) চকবাজার থানায় ছেলে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনের তদন্ত শেষে ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার চার্জশিট দাখিল করে।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল–১ মামলার রায় ঘোষণা করে। বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার অপু, ইফতি মোশাররফ সকাল, মাজেদুর রহমান মাজেদসহ তৎকালীন বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায় এবং বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৬ মার্চ হাইকোর্ট ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখে। তবে আসামিপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রায়ে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে তাদের দাবি, আর তাই তারা আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, আপিল শুনানি শেষে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, “আমরা এখনো ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার প্রত্যাশায় আছি। রাষ্ট্রের উচিত দ্রুত মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা।”
সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এমন একটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্বিত হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়।
বুয়েট প্রশাসনও আবরারের স্মৃতি ধরে রাখতে শেরেবাংলা হলে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেছে। সহপাঠীদের মতে, আবরারের আদর্শ ও সাহসিকতা তরুণ প্রজন্মের কাছে ন্যায়বোধের প্রতীক হয়ে আছে।