মিয়ানমারের ভেতরেই কেবল রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। তিনি বলেন, “এই সংকটের স্থায়ী সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব। মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ যদি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার উন্নতি সম্ভব হবে না।”
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে মঙ্গলবার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এই মন্তব্য করেন।
তিনি স্মরণ করান, আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম সহিংসতায় প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। অনেকে এখনও রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়ে গেছে। এই সংকটের উৎপত্তি এবং সমাধান-দুটি ক্ষেত্রেই মূল দায়িত্ব মিয়ানমারের।
তিনি আরও বলেন, “এখন আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, তবে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় কোনো উন্নতি হয়নি। প্রতিদিন তাদের গ্রেপ্তার ও আটক হওয়ার ভয়, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার, চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগের মতো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। পাশাপাশি তারা বর্ণবাদ ও আতঙ্কের শিকার। তিনি বাংলাদেশের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, দেশটি প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং নতুন সংঘাতের পর আরও দেড় লাখকে গ্রহণ করেছে।”
‘বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা এসেছে, কিন্তু তবুও তহবিলের ঘাটতি রয়ে গেছে। যথেষ্ট তহবিল ছাড়া জরুরি সহায়তা কমাতে হতে পারে, যা শিশুদের পুষ্টিহীনতা বাড়াবে এবং আরও রোহিঙ্গা বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে’-উল্লেখ করেন ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।
বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান তিনি, তহবিল, পুনর্বাসন, শিক্ষা এবং শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে হবে। তবে শুধু মানবিক সহায়তা দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। গ্রান্ডি বলেন, প্রভাবশালী দেশগুলোকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে, যাতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।
‘ধারাবাহিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও নতুন পন্থার মাধ্যমে জটিল সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করা সম্ভব। মিয়ানমারের জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত, বাস্তব ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন অধ্যায় শুরু করতে হলে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার স্থায়ী সমাধানই একমাত্র বিকল্প পথ’-যোগ করেন ইউএনএইচসিআর প্রধান।