পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা পৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক এবং ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)-এর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর তরিকুল ইসলাম।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য এবং দেশটির সাবেক সিটি মিনিস্টার হলেও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি। অভিযোগ অনুযায়ী, রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিধান ভঙ্গ করে মিথ্যা হলফনামার মাধ্যমে তাঁরা প্লট বরাদ্দ নেন। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, তাঁদের প্রত্যেকের নামেই ঢাকা শহরে জমি, বাড়ি ও গাড়ি ছিল। তবুও তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৬০ কাঠার প্লট গ্রহণ করেন, যা ফৌজদারি অপরাধ এবং যার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) একই প্রকল্পের অন্য তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ও তাঁর নিকটাত্মীয়রা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লট নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং নানা অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন তাঁরা। গত ১০ মার্চ এই ছয় মামলার অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।
গত ৩১ জুলাই ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত এই ছয় মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজউকের সাবেক কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার।
টিউলিপ সিদ্দিক বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাঁর দাবি, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তিনি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সমন পাননি। তবে দুদক বলছে, আদালতের নির্দেশ অনুসারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অভিযুক্তদের হাজির হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।