রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যার ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে আরেক কর্মকর্তার যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১১ আগস্ট) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন বহাল থাকা দুজন হলেন পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান ও পলাতক এএসআই কামরুজ্জামান। অপর সাজাপ্রাপ্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসানের সাজা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ বছর। এছাড়া পুলিশের সোর্স রাসেলকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। অপর আসামি সুমন আগেই সাজাভোগ শেষ করে মুক্তি পেয়েছেন।
এ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে জনির পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদুল হাসানকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন-২০১৩ এর অধীনে হাইকোর্টে এটি প্রথম রায়। রোববার ও সোমবার দুই দিনব্যাপী রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ইরানি ক্যাম্প এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমনের সঙ্গে উপস্থিতদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সুমনের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে জনি ও তার ভাই ইমতিয়াজকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করে। এতে জনির অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার ছয় মাস পর, ৭ আগস্ট, জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন পল্লবী থানায় মামলা করেন, যা এই আইনের অধীনে প্রথম মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
বিচার শেষে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই সোর্সকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজকের রায় ঘোষণা করে। রায়ের পর জনির পরিবার অসন্তোষ জানিয়ে উচ্চ আদালতে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে।