• শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৩:৫১

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও অব্যাহত পাল্টাপাল্টি হামলা

প্রতিনিধি: / ৪৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫

আন্তর্জাাকিত ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান সংঘাত নতুন এক নাটকীয় মোড় নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও তা কার্যকর হওয়ার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে ফের রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটে। বিবিসি, এপি ও দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উত্তাল পরিস্থিতির বিস্তারিত চিত্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৪ জুন ভোর ৮টার মধ্যে একটি “সম্পূর্ণ ও সর্বগ্রাহী যুদ্ধবিরতি”কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেন। তবে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, এই সময়সীমার মাত্র দু’ঘণ্টা পরই ইসরায়েল অভিযোগ করে, ইরান তাদের লক্ষ্য করে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
ইরানের সেনাবাহিনী এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, তারা কোনো হামলা চালায়নি এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেনি। কিন্তু ইসরায়েলি প্রশাসন এই হামলাকে যুদ্ধবিরতির সরাসরি লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ ইরানকে “তীব্র প্রতিহিংসামূলক অভিযান”চালিয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। এপি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরপর ইসরায়েলি বিমানবাহিনী তেহরানের ইউভিন কারাগারসহ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। দ্য টাইমস জানায়, এই হামলায় কারাগারটির একাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুই দেশের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে বহু প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলের বিয়ার্সশেবা শহরে ইরানের হামলায় অন্তত ৪ থেকে ৫ জন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হয়েছে। অপরদিকে ইরানে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় প্রায় ৯৫০ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে টাইম ম্যাগাজিন, যদিও এ সংখ্যা নির্ভরযোগ্যভাবে যাচাই করা যায়নি।
বিবিসির তথ্য মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির শর্তে সম্মতি জানালেও ইরান তা শর্তসাপেক্ষে মেনে নিতে চায়। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে তারাও হামলা বন্ধ করবে না। কাতার ও চীনের মধ্যস্থতায় কিছু আলোচনার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া এই সংকট নিয়ে আসন্ন ন্যাটো সম্মেলনে ব্যাপক আলোচনা হবে বলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
টাইমের তথ্য অনুযায়ী, ইরান তাদের নতুন প্রজন্মের “খাইবার শেকান”ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল মোসাদ পরিচালিত গোপন ড্রোন ঘাঁটি থেকে “অপারেশন রাইজিং লায়ন”নামে নতুন সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রও এ পরিস্থিতিতে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, মার্কিন ই ২ বোম্বার উড়োজাহাজ গুয়াম ঘাঁটি থেকে মোতায়েন করা হতে পারে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও বাস্তবে সংঘাত থেমে নেই। বরং দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট ও প্রতিশোধমূলক মনোভাব পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফ্রান্সের মতো শক্তিগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতা থাকলেও, তা এখনও কোনো স্থায়ী শান্তির বার্তা আনতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের অবসান হয়নি। বরং যুদ্ধবিরতির আড়ালেও পাল্টাপাল্টি হামলায় যুদ্ধ আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল যেখানে শান্তির পথ খুঁজছে, সেখানে দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছে। এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে, তা এখনও অনিশ্চিত।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com