২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন দলটির ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত হন কয়েক শতাধিক মানুষ, যাঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের হয় দুটি মামলা—একটি হত্যা মামলা এবং অন্যটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত দুটি মামলার রায় দেন। সেখানে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে গৃহীত হয়। পাশাপাশি, কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন।
হাইকোর্টে ব্যাপক শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দেন, যেখানে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি ‘লিভ টু আপিল’ (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) করে।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে এবং ২০২৫ সালের ১৩ মার্চ আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার আদালত শুনানির জন্য আবেদন দুটি নিয়মিত আপিল বেঞ্চে পাঠান। এই ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় একসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ চলতি বছরের ১৫ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। তবে ২৬ মে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে শুনানি না হওয়ায় আজ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ নতুন করে শুনানির দিন ধার্য করেন।
পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (২৭ মে)।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেন, “আদালত আপিল শুনানির জন্য আগামীকাল দিন রেখেছেন। প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে না থাকায় আজ শুনানি হয়নি।”