• শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ১১:১৭

আন্দোলনে অচল প্রাথমিক শিক্ষা

প্রতিনিধি: / ৫০ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে গেছেন। পূর্বঘোষিত এই আন্দোলনের ফলে প্রাথমিক শিক্ষাপর্যায়ে মারাত্মক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। একদিকে যেমন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শিক্ষাগত ক্ষতির শঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (২৬ মে) থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন না, অংশ নিচ্ছেন না কোনো পরীক্ষায়ও। আন্দোলনের আয়োজক ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ জানিয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে অনির্দিষ্টকালের জন্য। সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, আন্দোলনের পথ তারা ছাড়ছেন না, তবে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছেন।

সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের তিনটি প্রধান দাবি—

১. সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।

২. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূর করা।

৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পান, যার প্রাথমিক মূল বেতন মাত্র ১১ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকরা পান ১১তম গ্রেডে বেতন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার কথা থাকলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষকরা। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, শুরুর বেতন ১১তম গ্রেডে না হলে আন্দোলন চলবে।

ধাপে ধাপে আন্দোলনের রূপ

• ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতিদিন ১ ঘণ্টার কর্মবিরতি

• ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি

• ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি

• ২৬ মে থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি

শিক্ষাব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষক। তাদের কর্মবিরতির কারণে ১ কোটিরও বেশি শিশু শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আগামী ৩ জুন থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার কথা। এর আগে মাত্র ছয়টি কার্যদিবস শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষক ধর্মঘটে তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থা শিখন ঘাটতিকে আরও প্রকট করবে বলে অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন।

ন্যায্য দাবি, কিন্তু সময় নিয়ে বিতর্ক

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু আন্দোলনের সময় নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তাদের মতে, করোনা-পরবর্তী শিখন ঘাটতি, ঈদের দীর্ঘ ছুটি—সব মিলিয়ে এখন শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ প্রয়োজন ছিল। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আন্দোলনের বদলে নির্বাচিত সরকারের অধীনে আলোচনা করাই অধিকতর যুক্তিসংগত হতো।

সরকার কী বলছে?

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষক দাবির বিষয়ে একটি কনসালটেশন কমিটি গঠন করা হয়েছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে। কমিটি সুপারিশ করে, সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করে একটি ‘এন্ট্রি লেভেল’ শিক্ষক পদ তৈরি করে তাতে ১২তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হোক। শিক্ষকরা এই সুপারিশ গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না এবং বলছেন, এতে তাদের মর্যাদা ও ন্যায্যতা ক্ষুণ্ন হয়েছে।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com