বিদেশ : যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া শত শত ফিলিস্তিনির মধ্যে আবারও নির্যাতনের লক্ষণ দেখা গেছে। হামাস চার বন্দির মৃতদেহ সম্বলিত কফিন হস্তান্তর করেছে বলে ইসরায়েল জানানোর পরপরই বৃহস্পতিবার ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় দুই ফিলিস্তিনি নারী ও ৪৪ সন্তানের মুক্তি দিতে বিলম্ব করেছে ইসরায়েল। আল জাজিরা জানিয়েছে, আঘাতের তীব্রতার কারণে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক ফিলিস্তিনিকে মিসর ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুক্তি পাওয়া গাজার বাসিন্দা আলা আল-বায়ারি আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি কারাগারে থাকাকালীন তিনি নির্যাতন, মারধর, অপমানের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আপনি যা কল্পনা করতে পারেন, তার সবকিছু প্রত্যক্ষ করেছি। মুক্তির পর এক বছরের মেয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার। নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের নগ্ন করে রাখা হয়েছিল, আমাদের উপর পানি নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং তারপর তারা বিদ্যুৎ (বৈদ্যুতিক শক) ব্যবহার করেছিল, নির্যাতনের জন্য।’ রামাল্লায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দি ইয়াহিয়া শ্রিদা ইসরায়েলি কারাগারগুলোকে ‘কবরস্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কষ্ট থেকে বের করে আনা হয়েছে। যেন আমাদের নিজেদের কবর খুঁড়ে বের করা হয়েছে। আমরা এমন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, যা পাহাড়ও বহন করতে পারে না। এটা ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন; আমরা কিসের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তা নিয়ে কথা বলাও খুব কঠিন।’ গাজা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম বলেন, কিছু ফিলিস্তিনি ফিরে এসেছেন, তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে। অন্যরা আটক অবস্থায় ইসরায়েলি নির্যাতনের কারণে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবারের সদস্য তাদের প্রিয়জনকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। যাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তারা নিশ্চিত করেছেন যে, তারা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের সবচেয়ে খারাপ পদ্ধতি প্রত্যক্ষ করেছেন।’ কুদস নিউজ নেটওয়ার্কের অনলাইনে শেয়ার করা ফুটেজে দেখা গেছে, গাজায় পৌঁছানোর পর পরিবারের সদস্যরা ও ছেড়ে দেওয়া ফিলিস্তিনিরা কাঁদছেন। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পরিবারের এক সদস্য তার মুক্তিপ্রাপ্ত আত্মীয়ের অবস্থা দেখে শোক প্রকাশ করে বলছেন, ‘পার্থক্যটা (আগের আর এখনকার অবস্থা) দেখুন, হে আল্লাহ!’ পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের আরেক ফুটেজে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি লুই সাবনেহকে বেশ কয়েক বছর কারাগারে থাকার পর প্রথমবারের মতো ছেলে জাবালের সঙ্গে দেখা করতে দেখা যায়। এদিকে, এক বিবৃতিতে হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তাদের পূর্ণ অঙ্গীকার এবং দ্বিতীয় ধাপে আলোচনায় বসার প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।