ফেনীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে পুরো জনপদ। ১৬ লাখ মানুষের এ জনপদের অধিকাংশ আক্রান্ত হঠাৎ এ বানের জলে। জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বাড়ছে অপর দুই উপজেলা সোনাগাজী ও দাগনভ‚ঞাঁয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের অভাবে চারিদিকে মানুষের হাহাকার। কোথাও বাড়ির এক তলা পেরিয়ে দোতলা ছুঁয়েছে বানের পানি। জেলার পাঁচ উপজেলার অধিকাংশ জনপদ ডুবে ফেনী শহর ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় বুক সমান পানি জমে মানুষের ঘর-বসতিতে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মানুষ। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিহীন হয়ে অন্ধকার জনপদে পরিণত হয় পুরো জেলা। ৮০ বছর পেরিয়ে যাওয়া কবির আহম্মদ বলেন, এ জন্মে এমন বন্যা আর দেখিনি। বাপ-দাদাদের থেকেও এমন বন্যার কথা শুনিনি। বন্যা কবলিতরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে সুপেয় পানি ও খাবারের। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক ত্রাণ নিয়ে এলেও সেসবের সুষম বণ্টন নিয়ে রয়েছে অভিযোগ ও অসন্তোষ। প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। দুর্গতরা জানান, এ মুহূর্তে শুকনো খাবারের চাইতেও স্যানিটারি ন্যাপকিন, রান্না করা খাবার এবং ওষুধ সবচেয়ে প্রয়োজন মানুষের। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া আকস্মিক বন্যা শুরুতে আঘাত হানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য লাগোয়া ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরে। বর্তমানে পানি বাড়ছে সোনাগাজী ও দাগনভ‚ঞাঁ এলাকায়। জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে ফেনীতে এ বন্যায় আট লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। দেড় লক্ষাধিক মানুষকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা নিজেরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার ছয় উপজেলায় ছয়টি ও জেলা সদরের একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও বিমান থেকে বিতরণ করেছে ৩৮ হাজার প্যাকেট। ফেনীর জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার আক্তার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসন ফেনীতে একজন নিহতের বিষয় নিশ্চিত করলেও। বন্যায় ১১ জন নিহতের খবর মিলেছে বিভিন্ন সূত্রে।
বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বিজিবি: মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বন্যাদুর্গত ফেনীর জেলার দাগনভ‚ঞায় ৫৫০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) এর তত্ত¡াবধানে ফেনীর দাগনভ‚ঁঞার সিলোনিয়া বাজারে দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে বিজিবি। বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিজিবি হাসপাতাল, ঢাকা এর মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মেজর শাহ মো. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত মেডিকেল ক্যাম্পেইনে বন্যাদুর্গত ২২৫ জন পুরুষ, ১৭৫ জন নারী ও ১৫০ জন শিশুসহ মোট ৫৫০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে।