সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়নের মিস্ত্রীডাঙ্গা গ্রামের নদীর তীরবর্তী ওয়াবদা বেড়ীবাঁদের পাশেই চিতালী মৎস্য ঘের নামে দেড়’শ বিঘা ফসলি জমিতে স্থানীয় ও পাশর্^বর্তী ইউনিয়নের প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন যুবলীগ নেতা বদিউজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে খলিলুর রহমান হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, বাহার হাওলাদার জোর পূর্বক কৃষকদের ওই জমিতে বিগত ৪ বছর ধরে মৎস্য ঘের করে আসছে। ওই ঘেরের পাশেই ৮০ বিঘা ফসলি জমিতে একইভাবে আরো একটি মৎস্য ঘের করছে স্থানীয় কতিপয় লোকজন।
কৃষকদের অভিযোগ প্রতি বছর ঘের মৌসুম এলেই নিজেদের ইচ্ছেমত লবন পানি তুলে সাধারণ কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে প্রভাবশালীরা। এত করে ধানসহ একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে চরম বাধাগ্রস্থ। এরপূর্বে কৃষকরা যেখানে আমন ও ইরি ধান দু’টি ফসল ফলাতেন, এখন সেখানে একটি মাত্র ফসল দেশী আমন তাও অতিরিক্ত লবনাক্ততার কারনে ফলন কমে গেছে। এ মৎস্য ঘেরের কারনে গত বছরে আমন ধানও উৎপাদনও সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ীরা জমি দখল করে সাধারন কৃষকদের হারির টাকাও সঠিকভাবে পরিশোধ করছে না।
ওই দুটি মৎস্য ঘেরে থাকা জমির মালিক, মিস্ত্রীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন শেখ, সাবেক মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আঃ মান্নান আকন, আঃ বারেক হাওলাদার, ফণি ভূষণ হাজরা, বিধান হালদার, শ্যামল হাজরা, আব্দুস ছালাম হাওলাদারসহ অর্ধশতাধিক কৃষকের দাবী, নিজেদের জমি থাকতেও এখন তারা ফসল ফলাতে পারছে না। চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে বলেও কিছু প্রতিকার হচ্ছে না। মাঠে কৃষকদের ধান থাকা অবস্থায় ফসলি জমিতে পাইপ দিয়েঘেরে লবন পানি তুলছে প্রভাবশালীরা। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে পেটের তাগিদে শহরে গিয়ে দিন মজুরি করে খেতে হবে। ফসলি জমিতে লবন পানি উত্তোলন বন্ধের জন্য ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জয় কুমার মন্ডল বলেন, এলাকার সাধারণ কৃষকরা এ লবন পানি উত্তোলন বন্ধের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে একাধীকবার অভিযোগ দিয়েছে। পরিষদ থেকে বার বার নিষেধ করা স্বত্তেও প্রভাবশালীদের ঠেকানো যাচ্ছে না।
এ সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা খানম বলেন, মিস্ত্রীডাঙ্গা গ্রামের স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফসলি জমিতে বেড়ীবাঁধের মধ্যে পাইপ বসিয়ে লবন পানি উত্তোলন বন্ধ করার জন্য একবার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন যৌথ অভিযান করে অবৈধভাবে বসানো পাইপগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, পুনরায় পাইপ বসিয়ে লবন পানি তোলা হচ্ছে। সাধারণ কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী পঞ্চকরন ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক বদিউজ্জামান মজুমদার বলেন, চিতালী মৎস্য ঘেরে প্রায় ২শ বিঘা জমি রয়েছে। এ ঘেরটির এক তৃতীয় অংশের জমির মালিকরাই যৌথভাবে ঘের করছেন। তার পিতাসহ তাদের বংশের লোকজনের ওই ঘেরে ২৭ বিঘা জমি রয়েছে। একটি অংশে ওই ঘেরে সাধারণ কৃষকদের ২৪ বিঘা জমি আছে, তাদের মতামতের ভিত্তিতে সকলকে প্রতি বছর হারির টাকা পরিশোধ করেই মৎস্য ঘেরটি করা হচ্ছে বলে তার দাবী।
এ বিষয় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আকাশ বৈরাগী বলেন, মিস্ত্রীডাঙ্গায় ফসলি জমিতে লবন পানি উত্তোলনের বিষয়টি তিনি অবহিত নন, তবে খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
https://www.kaabait.com