• মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০৫:৪৭

দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস ও পিও’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

প্রতিনিধি: / ৩২ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

দুই উপদেষ্টার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তার (পিও) বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন।

রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক জানান, স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক পিও তুহিন ফারাবির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কমিশন ইতোমধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গাজী সালাহ উদ্দিন ফারাবি এবং হাজী সালাউদ্দিন তানভিরের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে, যারা সরকারি পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত।

মো. আক্তার হোসেন বলেন, “দুদক আইনের আওতায় নিয়মিত প্রক্রিয়ায় তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। শিগগিরই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে।”

এর আগে, দুর্নীতির অভিযোগ এনে ‘যুব অধিকার পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল করে দুদক কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। একই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম দুই উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করে।

তদন্তসূত্রে জানা গেছে, মোয়াজ্জেম হোসেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রকৌশলী বদলি, ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে তদবিরের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। বিশেষ করে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সচিবালয় ও বিভিন্ন দপ্তরে অবস্থান করে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোয়াজ্জেম হোসেনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, গণপূর্ত, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা বদলি ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটিয়ে শত শত কোটি টাকা আদায় করা হয়। শুধু প্রকৌশলী বদলিতেই মোয়াজ্জেম লক্ষ লক্ষ টাকা নিতেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রেক্ষাপটও ছিল কম আলোচিত নয়। অভিযোগ অনুসারে, তুহিন ফারাবি এবং ডা. মাহমুদুল হাসান চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, সিভিল সার্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষ নিতেন। প্রতিটি বদলি বা নিয়োগের জন্য ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো বলে জানা যায়। এ ছাড়া নার্স ও মিডওয়াইফ বদলির ক্ষেত্রেও প্রতিজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা করে নেওয়া হয়।

বিশেষত, অভিযোগ রয়েছে, এ টাকার বড় একটি অংশ রাশিয়ায় পাচার করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে ডা. মাহমুদুল হাসান অবস্থান করছেন।

এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং ব্যক্তিগত কারণেই দায়িত্ব ছেড়েছেন। তাঁর ভাষায়, “আমি কোনো দুর্নীতি করিনি, কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।”

তবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক পিও তুহিন ফারাবি এবং ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলেও তাদের পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তুহিনকে ইতিমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে এবং মাহমুদুল হাসান বর্তমানে রাশিয়ায় রয়েছেন।

 


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com